আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ: আসসালামু আলাইকুম, আমি লিছা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমি জানি আপনারা “আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করছেন।
তাহলে আপনি এখন সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয় সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। তো আসুন আমরা জেনে নিই।
আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ
আপনি কি আরবি ১২ মাসের নাম অর্থসহ জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এখনি মুখস্থ করে ফেলেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের এগুলো দরকার হয়।
আর আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে এ নামগুলো অবশ্যই মনে রাখতে হবে। কারণ বিভিন্ন ইবাদাত ও উৎসবে এ নামগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে আরবি ১২ মাসের নাম দেওয়া হলো।
(১) মহররম
(২) সফর
(৩) রবিউল আউয়াল
(৪) রবিউস সানি
(৫) জমাদিউল আউয়াল
(৬) জমাদিউস সানি
(৭) রজব
(৮) শা'বান
(৯) রমজান
(১০) শাওয়াল
(১১) জ্বিলকদ
(১২)জ্বিলহজ্জ
মাসের দৈর্ঘ্য
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রতিটি মাস নতুন চন্দ্র চক্রের আগমনের সাথে সাথে শুরু হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, এটি চাঁদের অর্ধচন্দ্রের (হেলাল) প্রকৃত পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী চন্দ্রচক্রের তথা পূর্ববর্তী মাসের সমাপ্তি চিহ্নিত করে এর ফলে নতুন মাস শুরু হয়।
ফলস্বরূপ চাঁদের দৃশ্যমানতা, পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় অবস্থান ও আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রতি মাসে ২৯ বা ৩০ দিন থাকতে পারে।
যদিও কিছু গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়, বিশেষত আলাভি, দায়ূদী এবং সুলেইমানি ও শিয়া ইসমাইলি মুসলিমরা এক ধরনের সারণীকৃত ইসলামি বর্ষপঞ্জি (নিচের অনুচ্ছেদ দেখুন) ব্যবহার করে যেখানে বিজোড়-সংখ্যার মাসে ত্রিশ দিন থাকে (ও একটি অধিবর্ষে দ্বাদশ মাসও) এবং জোড় মাসে ২৯টি দিন থাকে।
আরবি ১২ নাম নামকরণের কারণ
মহররম : এ মাসে জাহেলি যুগে যেকোনো ধরণের যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত করা হারাম ও অবৈধ ছিল। তাই এই মাসকে মুহাররমুল হারাম নামকরণ করা হয়েছে।
সফর : সফর শব্দটি মূলত সিফর থেকে নির্গত। এর অর্থ হলো শূন্য হওয়া। জাহেলি যুগে এ মাসে লোকেরা যুদ্ধের জন্য বের হয়ে গেলে বাড়ি-ঘর খালি হয়ে যেত, তাই সফরের মাসের নাম রাখা হয়েছে সফর।
রবিউল আউয়াল : এই রবিউল আউয়াল মাসের নামকরণকালে ফসলে রবি, অর্থাৎ বসন্তকাল ছিল। তাই মাসের নামকরণ হয়েছে রবিউল আউয়াল।
রবিউস সানি : এর নামকরণকালে বসন্তের শেষার্ধে পড়ার কারণে রবিউল আখের বা শেষ বসন্ত নাম রাখা হয়।
জমাদিউল আউয়াল : জুমাদা শব্দটি এসেছে জুমুদ থেকে। এর অর্থ হলো জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। যখন এই মাসের নাম রাখা হয়, তখন ঠাণ্ডার মৌসুম আরম্ভ হয়, কেননা ঠাণ্ডার কারণে বেশির ভাগ জিনিস জমে যায়। এ জন্য এ মাসের নাম এভাবে রাখা হয়েছিল।
জমাদিউস সানি : এই মাসের নাম রাখার কারণ হলো, এই মাসের শেষে শীতের প্রচণ্ডতায় পানি পর্যন্ত জমে যেত। তাই এর নাম রাখা হ জমাদিউস সানি।
রজব : রজিব শব্দ থেকে রজব শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। এর অর্থ সম্মান করা। যেহেতু এ মাসকে আরবরা সম্মান করত এবং শাহরুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলত, তাই এ মাসের নাম রজব বা সম্মানিত মাস রাখা হয়।
শাবান : শাব শব্দ থেকে শাবান শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হলো বের হওয়া, প্রকাশ হওয়া, বিদীর্ণ হওয়া।
এ মাসে বিপুল কল্যাণ প্রকাশিত হয়, মানুষের রিজিক উৎপাদন ও বণ্টিত হয় এবং তাকদিরের ফয়সালাগুলোও বণ্টন করে দেওয়া হয়। তাই এ মাসের নাম শাবান রাখা হয়েছে।
রমজান : রমজান শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে জ্বালানো-পোড়ানো। যেহেতু এই মাসে মুমিনের গুনাহগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়। তাই এ মাসের নাম রমজান।
শাওয়াল : শাওয়াল শব্দটি ‘শাওল’ মূলধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ হলো বাইরে গমন করা। এখানে আরববাসী নিজ ঘরবাড়ি ত্যাগ করে ভ্রমণে যেত। তাই এর নামকরণ করা হয় শাওয়াল।
জুলকদ/জিলকদ : ‘জুল/জিল’ অর্থ ওয়ালা আর ‘কাদাহ’ অর্থ হলো বসা। এ মাস সম্মানিত মাসের একটি। আরবরা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকত।
জুলহজ্ব/জিলহজ্ব : জুলহজ্ব/জিলহজ্ব শব্দটি সম্ভবত হাজ্জাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ একবার হজ করা। অথবা শব্দটি ‘হিজ’ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর মানে অর্থবছর।
যেহেতু এই মাস বছরের শেষাংশে আসে এবং এর দ্বারাই পূর্ণ বছরের সমাপ্তি ঘটে, তাই এই মাসের নামকরণ হয়েছে জুলহজ্ব/জিলহজ্ব।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ বিষয়টিও আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পান, তাহলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।