আজকে আমরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের জন্য নিয়ে এসেছি “এবার নিজেই কষে ফেলুন নিজের বাড়ির তৈরির খুটি নাটি সব হিসেব-নিকেশ”। আসা করি আপনাদের এই টপিক পছন্দ হবে। তো চলুন পড়া যাক:
এবার নিজেই কষে ফেলুন নিজের বাড়ির তৈরির খুটি নাটি সব হিসেব-নিকেশ
একটি ‘বাড়ি’ মানে শুধুমাত্র ইট-সুড়কি আর চুনাপাথরে গড়া সাজানো গোছানো কোন অবয়ব অথবা আশ্রয়স্থল নয়। দির্ঘদিন ধরে পুষে রাখা অনেকগুলো ছোট ছোট লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
সাধ ও সাধ্যের সাথে সমন্বয় রেখে প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে নিজের আশ্রয়স্থল, একটা বাড়ি। যেখানে সব কিছুতেই থাকবে আপন ভাবনার প্রতিচ্ছবি। নিত্যই বাড়ছে মানুষ , বাড়ছে গ্রাম, শহর, নগর, বন্দর, আর এসব স্থানে নাগরিক যজ্ঞের সাথে তাল মেলাতে বাড়ছে মানুষের বাড়ি-ঘর।
প্রয়োজনের তাগিদে অনেক কস্টে সঞ্চয় জমিয়ে আপনি হয়তো এই মুহুর্তে ভাবছেন আপনার ও আপনার আপনজনদের জন্য একটা স্বপ্নের নীড় গড়ার কথা। কিন্তু আপন তো আর ইঞ্জিনিয়র অথবা বাড়ি তৈরির কারিগর নন!
এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তরের অভিজ্ঞতা নিতে ছুটতে হবে নানান জনের কাছে। জানেন তো, ”নানা গুণির নানা মত”। দিনকতক পর, একেক জনের একেক রকম অভিজ্ঞতা জানতে আর শুনতে ‘জগাখিচুড়ি পরামর্শের ডালি মাথায় নিয়ে শেষ অবধি চিন্তার বলিরেখা হয়তো ফুটতেও পারে আপনার চোখে মুখে ।
এসবের দরকার নেই একটুও। সিদ্ধান্ত আপনার, পরিকল্পনাটাও হোক আপনার। জানেনতো নিজে নিজে কিছু কাজ শুরু থেকে শেষ করার মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রমি পাবার আনন্দ আছে।
হ্যা, নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি আপনাকে, জানেনতো! যা দিনকাল পড়েছে এখন!
সবজিওয়ালা থেকে উপরওয়ালা প্রায় সবাই আপনাকে ঠকাতেই তটস্থ।একটু খানি চোখ কান এদিক-ওদিক তো কেল্লাফতে ! কেও না কেও ঠিকি ঠকে নেবে খানিকটা হলেও!
কত টাকা লাগবে , ইটের খরচ কেমন হবে, সিমেন্ট কি পরিমান লাগবে? মিস্ত্রী খরচ, রড খরচ,বালি, পিকিট ইত্যাদি সবকিছুই কি পরিমান লাগবে আর কত খরচ হবে তা ঘরে বসে নিজেই বের করে ফেলুন।
আপনি যখন আগে ভাগেই সব হিসেব কষে গড় গড় করে জানিয়ে দেবেন রাজমিস্ত্রীদের অথবা ইঞ্জিনিয়রকে তখন দেখবেন আপনাকে আর ঠকাতে পারছেনা কেওই । একজন ‘দক্ষ প্রকৌশলীর’ মতই আপনিও হতে পারেন !
আসুন, এই মুহুর্তে যারা নিজের একটা বাড়ি করতে যাচ্ছেন এবার তারা জেনে নিই বিস্তারিত ।
আর হ্যা, যারা এখন করছেননা, ভবিষ্যতে তো করবেন নিশ্চয়ই ? তারা এই লিখাটা আর্কাইভে রাখুন আপাতত।
মেহেদী হাসান, সিভিল এন্ড কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পাদনায় বিস্তারিত
→ প্রথমে স্থির করুন কত রুমের বাড়ি করবেন। এরপর খাতা কলম হাতে বসে পড়ুন হিসেবে
১০” ওয়াল গাথুনীতে প্রতি ০১’ (স্কয়ার ফিট) গাথুনীতে ১০ টি ইট লাগে।
০৫” ওয়াল গাথুনীতে প্রতি ০১’ (স্কয়ার ফিট) গাথুনীতে ০৫ টি ইট লাগে।
গাথুনী এব প্লাস্টারে ০১ বস্তা সিমেন্টে ০৪ বস্তা বালি। তবে ০৫ বস্তাও দেওয়া যায়।
নিচের ছলিং এ প্রতি ০১’ (স্কয়ার ফিট) এর জন্য ০৩ টি ইট লাগে।পিকেট ইট দিয়ে খোয়া করতে হয়।
০৯ টি পিকেট ইট দিয়ে ০১ সিএফটি খোয়া হয়।সিএফটি অর্থাৎ ঘনফুট।
এসএফটি অর্থাৎ দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তের দিক দিয়ে।কলাম এবং লিংটেল এর হিসাব সিএফটি তে করতে হয়।
ইঞ্চিকে প্রথমে ফুটে আনতে হবে। ( ১০” ÷ ১২ = ০.৮৩৩)এবং গাথুনীতে ও প্লাস্টারের হিসাব এসএফটি তে করতে হয়।* ১ ঘনমিটার ইটের গাথুনীর ওজন ১৯২০ কেজি।
* ১ ব্যাগ সিমেন্টে পানি লাগে ২১ লিটার।
* ১০০ এস,এফ,টি প্লাষ্টারে ১:৪ অনুপাতে সিমেন্ট লাগে ২ ব্যাগ।
* গাথুনীর প্লাষ্টারে ১:৫ অনুপাতে সিমেন্ট দিতে হয়। সিলিং প্লাষ্টারে ১:৫ অনুপাতে সিমেন্ট দিতে হয়।
* প্রতি এস,এফ,টি নিট ফিনিশিং করতে = ০.০২৩৫ কেজি সিমেন্ট লাগে।
* মসলা ছাড়া ১ টি ইটের মাপ = (৯ ১/২”*৪ ১/২”*২ ৩/৪”)
মসলাসহ = (১০”*৫”৩”)10 mm =1 cm
100 cm = 1 m (মিটার)Convert
1″ = 25.4 mm
1″ = 2.54 cm
39.37″ = 1 m
12″ = 1′ Fit
3′ = 1 Yard (গজ)
1 Yard = 36″
72 Fit = 1 bandil.
→ রডের পরিমান নির্ণয় করার পদ্ধতি
- 10 mm = 0.616 kg/m = 3 suta
- 12 mm = 0.888 kg/m = 4 suta
- 16 mm = 1.579 kg/m = 5 suta
- 20 mm = 2.466 kg/m = 6 suta
- 22 mm = 2.983 kg/m = 7 suta
- 25 mm = 3.854 kg/m = 8 suta
→ রডের ওজন
- ৮ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.১২০ কেজি।
- ১০ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.১৮৮ কেজি।
- ১২ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.২৭০৬ কেজি।
- ১৬ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.৪৮১২ কেজি।
- ২০ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.৭৫১৮ কেজি।
- ২২ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন = ০.৯০৯৭ কেজি।
- ২৫ মিলি মিটার এক ফুট রডের ওজন =১.১৭৪৭ কেজি।
উপরে যে কনভার্ট সিস্টেম দেয়া হয়েছে, এর প্রতিটি যদি আপনার জানা থাকে তাহলে বাস্তবে কাজ করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।যেমন, ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেমে রডের আন্তর্জাতিক হিসাব করা হয় kg/m এ।আবার বাংলাদেশে সাধারন লেবারদের সাথে কাজ করার সময় এই হিসাব জানা একান্তই জরুরী এছাড়া ও নিম্নোক্ত বিষয়টিও জেনে রাখুন ।
8 mm -7 feet -1 kg
10 mm -5 feet -1 kg
12 mm -3.75 feet – 1 kg
16 mm -2.15feet -1kg
20 mm -1.80feet -1kg
22mm -1.1feet -1kg
→ রডের মাপ ফিট মেপে kg বের করা হয়
এই সুত্রটি মনে রাখুন ( রডের ডায়া^2 / 531,36 ) যেকোনো ডায়া রডের এক ফিটের ওজন বাহির হবে ।এখনে অবশ্যই রডের ডায়া মিলি মিটারে উল্লেখ করতে হবে।
→ খোয়ার হিসাব
* ১ টি ইটে = ০.১১ cft খোয়া হয়।
* ১০০ টি ইটে = ১১ cft খোয়া হয়।
* ১০০০ টি ইটে = ১১১.১১ cft খোয়া হয়।
→ বালির হিসাব
* ১০৯ ফিট = ১২.২৫cft,
* ১০০ sft ৫” গাথুনীতে ১:৫ অনুপাতে সিমেন্ট লাগে ২ ব্যাগ।
* ১০০ sft ১০” গাথুনীতে ১:৫ অনুপাতে সিমেন্ট লাগে ৪ ব্যাগ। বালু লাগে ২৪ cft।
→ ঢ়ালাই এর হিসাব
* ১০০ cft ঢ়ালাই এ ১:২:৪ অনুপাতে সিমেন্ট ১৭ ব্যাগ, বালু ৪৩ cft, খোয়া ৮৬ cft লাগে।
* ১ cft ঢ়ালাই এ ১:২:৪ অনুপাতে সিমেন্ট ০.১৭, বালু ০.৪৩ cft, খোয়া ০.৮৬ cft লাগে।
→ এবার একনজরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাথমিক হিসাব নিকাসটাও জানুন !
এক ঘনমিটার ইটের গাঁথুনীর কাজে প্রচলিত ইটের প্রয়োজন= ৪১০ টি।
এক ঘনফুট ইটের গাঁথুনীর কাজে প্রচলিত ইটের প্রয়োজন=১১.৭৬=১২ টি
এক ঘনমিটার ইটের গাঁথুনীর কাজে মেট্রিক ইটের প্রয়োজন= ৫০০ টি।
এক ঘনফুট ইটের গাঁথুনীর কাজে মেট্রিক ইটের প্রয়োজন= ১৪.২৮ টি।
………………
এক বর্গমিটার জায়গায় একস্তর ইটের ফ্লাট সোলিং এর জন্য ইটের প্রয়োজন=৩১ টি।
এক বর্গমিটার সোলিং এ চিকন বালির প্রয়োজন=০.০১৫ ঘনমিটার
এক বর্গমিটার জায়গায় একস্তর ইটের হেরিং বোন বন্ডের জন্য ইটের প্রয়োজন=৫২ টি।
এক বর্গমিটার হেরিং বোন বন্ডের জন্য চিকন বালির প্রয়োজন=০.০৩ ঘনমিটার
………………
ইটের গাঁথুনীর কাজে শুকনা মসল্লা এর পরিমাণ=৩৫%
এক ঘনমিটার সিমেন্ট=৩০ ব্যাগ….
11. এক বর্গমিটার নীট সিমেন্ট ফিনিশিং এর জন্য(NCF) সিমেন্টের প্রয়োজন=২.৭-৩ কেজি
ডিপিসি এ পাডলোর পরিমাণ সিমেন্টের ওজনের ৫% অর্থাৎ প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের জন্য ২.৫ কেজি।
………………
এক ঘনমিটার এম,এস রডের ওজন =৭৮৫০ কেজি বা ৭৮.৫০ কুইন্টাল
এক ব্যাগ সিমেন্টের ওজন=৫০ কেজি এবং আয়তন=০.০৩৪৭ ঘনমিটার
এক ব্যাগ হোয়াইট সিমেন্টের ওজন=৪০ কেজি
আবাসিক দালানের জন্য বাসযোগ্য ক্ষেত্রফল প্লিন্থ ক্ষেত্রফলের ৫০%-৫৬% হওয়া উচিত।
১ রানিং মিটার দৈর্ঘে এন্ড এজিং এ ইটের পরিমাণ=১/.১২৭=৮ টি।
আর.সি.সি কাজে ব্যবহৃত প্রতি মিটার এম.এস.রড এর ওজন নির্ণয়ের সুত্র =d2/১৬২.২ কেজি।
এক ঘনমিটার ছোট সাইজের খোয়ার জন্য ইটের প্রয়োজন ৩২০ টি এবং বড় সাইজের খোয়ার জন্য ৩০০ টি।
আর.সি.সি কাজে ব্যবহৃত প্রতি কেজি এম.এস.রড এর র্দৈঘ্য নির্ণয়ের সুত্র =১৬২.২/d2 মিটার
নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য চালনা দুরুত্ব ৩০ মিটার এবং উত্তোলন দুরুত্ব ১.৫ মিটার।
কম্প্রেশন বারে হুক ছাড়া ল্যাপিং ২৪D এবং হুকসহ ৪৪D আবার, টেনশনে হুক ছাড়া ল্যাপিং ৩০D এবং হুকসহ ৬০D.
জলছাদের কাজে খোয়া,চুন,সুরকির অনুপাত=৭:২:২
সেপটিক ট্যাংক এর নুন্যতম প্রস্থ ৬০সেমি এবং তরলের নুন্যতম গভীরতা ১ মিটার।
সোক ওয়েলের নুন্যতম ব্যাস ৯০ সেমি এবং গভীরতা ইনভার্ট সমতল হতে ১.৫ মিটার।
কালভার্ট এর স্প্যান ৬ মিটারের কম এবং ব্রিজের স্প্যান ৬ মিটারের বেশি
ব্রিজ এর স্ল্যাবকে ডেকস স্ল্যাব বলে।
ঢেউটিনের প্রমাণ দৈর্ঘ্য: (১.৮০,২.২০,২.৫০,২.৮০,৩.২০)মিটার এবং প্রস্থ ০.৮০মিটার এবং ঢেউয়ের গভীরতা ১৮ মি.মি
আশা করি আপনারা এবার নিজেই কষে ফেলুন নিজের বাড়ির তৈরির খুটি নাটি সব হিসেব-নিকেশ, টপিকটি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্ট টি আপনার উপকারে আসে তা হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।