শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল

শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল: প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম, স্বাগত জানাচ্ছি আজকের এই শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল পোস্টে। আশা করি আপনারা এই পোস্টটি পড়ে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। 

আপনারা যদি আমাদের শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল পোস্টটি পড়ে এতটুকুও উপকৃত হন তবেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল

শিল্পনীতি কি?
শিল্পনীতি একটি দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে৷ শিল্পায়নের গতিকে অব্যাহত জন্য সরকার অবস্থার আলোকে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে শিল্পনীতি ঘোষণা করে এবং সময়ের ব্যবধানে এর সংশোধন ও পরিবর্তন করে থাকে৷ 

শিল্পনীতি কি কি?

একটি সুষ্ঠু শিল্পনীতি শিল্পোদ্যোক্তাদেরকে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
শিল্প স্থাপনে সরকারি উৎসাহ দান
দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সরকার শিল্পনীতিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করে৷ এক্ষেত্রে সরকার সাধারণত যেসব সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাদি নিম্নে তুলে ধরা হলঃ সরকারি শিল্পনীতি অনুযায়ী সুষম বিকাশের জন্য সমগ্র দেশকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছেঃ
উন্নত এলাকা
স্বল্পোন্নত এলাকা
অনুন্নত এলাকা
রাজস্ব সুবিধা

উন্নত এলাকা

যেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে এবং যথেষ্ট শিল্পায়ন ঘটেছে৷

স্বল্পোন্নত এলাকা

যেখানে আংশিক অবকাঠামোর বিকাশ ঘটেছে এবং সামান্য কিছু শিল্পায়ন রয়েছে৷

অনুন্নত এলাকা

যেখানে আংশিক অবকাঠামোর বিকাশ মোটেও সাধিত হয় নি এবং শিল্পায়নের কোন ছোঁয়া লাগে নি৷

রাজস্ব সুবিধা

  • সরকারের বর্তমান শিল্পনীতিতে নিম্নোক্ত রাজস্ব সুবিধাদি প্রদান করা হয়েছেঃ
  • কর অবকাশ
  • বর্ধিত হারে অপচয় ধার্যের সুযোগ 
  • বিনিয়োগ ভাতা
  • লোকসান মুনাফার সাথে সমন্বয়সাধন
  • মূলধনি মুনাফা করমুক্ত
  • দ্বৈত কর রেয়াত

কর অবকাশ
সরকার উন্নত স্বল্পোন্নত এবং অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে যথাক্রমে পাঁচ বছর সাত বছর ও নয় বছরের কর অবকাশের সুবিধা প্রদান করেছেন৷ এ কর অবকাশের মেয়াদ শিল্পে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মাস থেকে হিসেবে করা হবে৷

এছাড়া শিল্পনীতিতে মৎস্যচাষ হাঁস মরগির খামার প্রতিষ্ঠা গরাদি পশু পালন দুগ্ধ উৎপাদন উদ্যান উন্নয়ন ও নার্সারি প্রভৃতি শিল্পে এলাকা নির্বিশেষে দশ বছরের কর অবকাশ দেয়া হয়েছে৷

বর্ধিত হারে অবচয় ধার্যের সুযোগ
উন্নত শিল্প এলাকার নতুন মেশিনারি বা প্ল্যান্টের বেলায় প্রথম বছরে শতকরা ৮০ ভাগ এবং পরবর্তী বছরে শতকরা ২০ ভাগ অবচয় ধার্য করার সুবিধা প্রদত্ত হয়েছে৷ তবে স্বল্পোন্নত এলাকায় স্থাপিত শিল্পের ক্ষেত্রে এই অবচয়ের হার প্রথম বছরে শতকরা ১০০ ভাগ হতে পারে৷

বিনিয়োগ ভাতা
নীতি অনুযায়ী কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মেশিনারি ও প্ল্যান্টের প্রকৃত মূল্যের শতকরা ২০ ভাগ বিনিয়োগ ভাতা দেয়া হবে৷ অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত শিল্পের ক্ষেত্রে এ বিনিয়োগ ভাতার হার শতকরা ২৫ ভাগ করা হয়েছে৷

লোকসান মুনাফার সাথে সমন্বয়সাধন
কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যদি লোকসান দেখা দেয় তবে এক বছরের লোকসান পরবর্তী বছরে স্থানান্তর বা অন্য বছরের মুনাফার সাথে সমন্বয় করা যাবে না৷

মুলধনি মুনাফা করমুক্ত
দালানকোঠা মেশিনারি ও প্যান্ট বিক্রয় থেকে অর্জিত মূলধনি মুনাফা ২ বছরের মধ্যে সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হলে অথবা নতুন কোন কোম্পানি শেয়ার ক্রয় করা হলে অথবা প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হলে ঐ মুনাফা করমুক্ত হবে৷

দ্বৈত কর রেয়াতঃ
বেদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে দ্বৈত কর রেয়াতের ব্যবস্থা  সরকারের ঘোষিত শিল্পনীতিতে রয়েছে৷
এতদ্ব্যতীত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় রয়্যালটি ও প্রযুক্তি ফি কোন কোন ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং আনুঙ্গিক কিছু কিছু ব্যয় কনমুক্ত রাখা হয়েছে৷

শিল্পের অর্থসংস্থানগত সুবিধা?
দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান একান্ত অপরিহার্য৷ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল প্রয়োজন হয়৷ আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পুঁজির অভাবে স্থানীয় মূলধনকেও সুষ্টু ও কার্যকরভাবে শিল্পায়ন কাজে ব্যবহার করা যায় না৷ কারণ শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা প্রযুক্তি প্রভৃতি বৈদেশিক মুদ্রার সংগ্রহ করতে হয়৷ 

সেজন্য সরকার দেশীয় উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নে আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ঋন কর্মসূচির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন৷ এ ছাড়াও সরকার স্থানীয় মুদ্রার নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রতিষ্ঠিত শিল্পের কার্যক্রম চালু রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্য বিভিন্ন উদ্যোগমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে৷


শিল্পনীতির কৌশল?

শিল্পনীতে একটি দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত ও দ্রুততর করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে৷ শিল্পায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য শিল্পনীতি বিশেষভাবে কার্যকর৷ সফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন ক্রটিবিচ্যুতি দেখা দিলে ক্রটিবিচ্যিুতিটি কোথায় তা যাচাই করার জন্য মূল্যায়ন করার প্রয়োজন হয়৷ সেই মোতাবেক সংসশোধনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হয়৷ নিচে শিল্পনীতির কৌশলের প্রথম পদক্ষেপ রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখানো হলঃ
শিল্পনীতির কৌশল বলতে কীভাবে বা কোন কোন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে শিল্প স্থাপনে কাজের  অগ্রগতি অর্জিত হয় তা বোঝায়৷ শিল্পনীতির উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য নিম্নোক্ত কৌশলসমূহ গ্রহণ করা হয়েছেঃ
গুণগত মানের ভিত্তিতে বর্তমান শিল্পসমূহের সামঞ্জস্য বিধান আধুনিকরণ পূনর্বাসন এবং প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থাপসমূহ বর্তমান ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা।
উপযুক্ত উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে মধ্যবর্তী এবং মৌলিক পর্যায়ে উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।
উপযুক্ত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশেষ করে অপ্রচলিত পণ্যসামগ্রী এবং বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ফার্মের জন্য রপ্তানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শিল্পসমূহের ব্যাপারে অব্যাহত পর্যালোচনা করে পর্যায়ক্রমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বর্ধিত পরিচালনাগত স্বাধীনতা প্রদান লক্ষ্যমাত্রী ধার্যকরণ এবং কাজের তত্ত্বাবধান ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সরকারি খাতের শিল্পসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি।
কিছু উৎসাহ দান ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প খাতের উন্নয়ন সাধন করা।
অন্বয়ী শিল্প এবং উপ ঠিকদারি বিকাশে উৎসাহ প্রদান।
দেশের সকল অঞ্চলে দ্রুত শিল্প বিস্তারে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।
বিশেষ উৎসাহ দান এবং গবেষণা উৎপাদন ক্ষমতা ও বিপণনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আরোপের মাধ্যমে তাঁতশিল্প এবং রেশম খাতসমূহকে শক্তিশালী করা।
গবেষণা ও উন্নয়নকে (R & D) উৎসাহিত করা এবং যথাযথ প্রযুক্তি গ্রহণ ও হস্তান্তর ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।
অপরিহার্যভাবে কৃষি উন্নয়ন নীতির সঙ্গে শিল্প উন্নয়ন নীতির সংযোগ সাধন করা৷

সরকারি ও বেসরকারি খাত
বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ ইং সালে প্রণীত শিল্পনীতিতে শিল্প বিনিয়োগ সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে উল্লেখ করে৷ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রেসমূহ সরকারি খাতের জন্য সংরক্ষিতঃ
অস্ত্র গোলাবারুদ এবং সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি
টেলিযোগাযোগ (বিতরণ ও সেবা ব্যতীত)
পারমাণবিক শক্তি এবং
সিকিউরিটি মুদ্রণ (কাগজি মুদ্রা) এবং টাকশাল৷
সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় বনায়ন এবং যান্ত্রিক নিষ্কাশন
বিমান পরিবহন (কার্গো ব্যতীত) এবং রেলওয়ে

তো বন্ধুরা আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের মনোপুত হয়েছে। ‘শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ? | শিল্পনীতির কৌশল’ এরকম আরো বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আমাদের  সাথেই থাকবেন বলে আশা করি। আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে শুভ বিদায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন