গ্রিন কেমিস্ট্রি কি? গ্রিন কেমিস্ট্রির ইতিহাস: আসসালামু আলাইকুম, আমি লিছা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমি জানি আপনারা “গ্রিন কেমিস্ট্রি কি? গ্রিন কেমিস্ট্রির ইতিহাস” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করছেন।
তাহলে আপনি এখন সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয় সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। তো আসুন আমরা জেনে নিই।
গ্রিন কেমিস্ট্রি কি? গ্রিন কেমিস্ট্রির ইতিহাস
গ্রিন কেমিস্ট্রি এমন একটি প্রক্রিয়া যা উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ঝুঁকি হ্রাস করে এবং পরিবেশ বান্ধব দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করে। এছাড়াও পরিবেশ ও মানব দেহের উপর রাসায়নিক দ্রব্যের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এর উদ্দেশ্য হলো জীবের জীবন চক্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করা এবং সময়োপযোগী অধিক কার্যকর উৎপাদ তৈরি করা।
গ্রিন কেমিস্ট্রির ইতিহাস
মাত্র কয়েক দশক পূর্বে ১৯৬২ সালে বিজ্ঞানী রেকহেল কারসনের একটি প্রকাশনা সাইলেন্ট স্প্রিং (Silent Spring) মানুষের মনে পরিবেশের দূষণ সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন করে তােলে।
এরই ধারাবাহিকতায় সাইলেন্ট স্প্রিং প্রকাশিত হওয়ার এক দশকের মধ্যেই ১৯৭০ সালে আবির্ভাব হয় পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার (Environmental Protection Agency)। যা বর্তমানে গ্রিন কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করে দিয়েছে।
গ্রিন কেমিস্ট্রি বারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই বারটি মূলনীতি বিজ্ঞানী পল অ্যানাসটাস (Paul Anastas) উপস্থাপন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা এবং শেষে জন. সি. ওয়ারনার ও (John C. Warnar) একই প্রস্তাব করেন।
গ্রিন কেমিস্ট্রির মূলনীতিগুলো নিচে আলোচনা করা হলো–
(১) বর্জ্য নিবারণ (Waste Prevent): কোনো শিল্প কারখানায় উৎপন্ন অতিরিক্ত বর্জ্য পরিষ্কার করার পরিবর্তে, কারখানায় যাতে বর্জ্য সৃষ্টি না হয়, এই শ্লোগানের উপর ভর করেই গ্রিন কেমিস্ট্রির পথ চলা শুরু হয়েছে।
(২) পারমাণবিক মিতব্যয়িতা (Atom Economy): পদার্থ উৎপাদনের বা সংশ্লেষণের পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যাতে সর্বাধিক পরিমাণ বিক্রিয়ক অণু বা পরমাণু পরস্পর মিলিত হয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ চূড়ান্ত উৎপাদ পাওয়া যায়।
(৩) কম ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ সংশ্লেষণ (Less Hazardous Chemical Syntheses) : শিল্প কারখানা যেখানেই হোক না কেন তার সংশ্লেষণ পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যাতে সর্বনিম্ন ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত নয় এরূপ পদার্থ উৎপন্ন হয়।
এছাড়া উৎপন্ন পদার্থ যাতে পরিবেশ এবং মানব দেহের উপর ক্ষতিকর কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(৪) নিরাপদ পদার্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত রাসায়নিক পদার্থ নকশীকরণ (Designing Safer Chemicals) : রাসায়নিক পদার্থ এমন হওয়া উচিত যা মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন এবং সর্বনিম্ন ক্ষতি সাধন করবে। তাই বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উত্তম নকশা (Design) বিশিষ্ট উপকারী বস্তু উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
(৫) নিরাপদ দ্রাবক এবং বিকারক ব্যবহার (Safer Solvents and Auxiliaries) : শিল্প কারখানায় কোনো উৎপাদ তৈরির সময় ব্যবহৃত সহায়ক রাসায়নিক পদার্থ (Auxiliaries) যেমন : দ্রাবক, পৃথককারী এজেন্ট এমন হওয়া উচিত যা অত্যন্ত কমমাত্রায় বিষাক্ত এবং যাতে পরিবেশের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে।
(৬) অল্প শক্তি দ্বারা অধিক উৎপাদন (Design for Energy Efficiency) : কোনো রাসায়নিক কারখানায় ব্যবহৃত বিদ্যুৎ শক্তির উৎস পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই বিক্রিয়া এমন হওয়া উচিত যাতে স্বল্প বিদ্যুৎ দ্বারা অধিক উৎপাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিক্রিয়াগুলো যদি সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে ঘটে তবে পরিবেশের উপর তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না।
(৭) নবায়নযোগ্য কাঁচামাল ব্যবহার (Use of Renewable Feed stocks) : শিল্প কারখানায় এমন সকল কাঁচামাল ব্যবহার করা উচিত যা নবায়নযোগ্য এবং এমন পদার্থ ব্যবহার করা উচিত নয় যা পরিবেশে জঞ্জাল বা বোঝা হিসেবে অবস্থান করে।
এছাড়াও কাঁচামালসমূহ যান্ত্রিক ও অর্থনৈতিকভাবে যেন পরিবেশ বান্ধব হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
(৮) পার্শ্ব উৎপাদ হ্রাসকরণ (Reduce Derivatives) : অপ্রয়োজনীয় পার্শ্ব উৎপাদ (Derivatives) উৎপন্ন হয় এমন বিক্রিয়া পদ্ধতি বর্জন করা উচিত। কারণ এ জাতীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অযথা অনাকাঙ্ক্ষিত বর্জ্য তৈরি হয়।
(৯) প্রভাবন (Catalysis) : সহজপ্রাপ্য এবং সুনির্দিষ্ট (Selective) প্রভাবন বিক্রিয়া দ্রুততর এবং অধিক উৎপাদের সহায়ক। তাই সুনির্দিষ্ট (Selective) প্রভাবক ব্যবহার করা উচিত।
(১০) বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নকশাকরণ (Design for Degradation of Waster) : রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন প্রক্রিয়া এমনভাবে নকশাকৃত (Designed) হওয়া উচিত যাতে পার্শ্ব উৎপাদনগুলো সহজেই পরিবেশের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় এবং পরিবেশের উপর বোঝা না হয়।
(১১) সঠিক সময়ে বর্জ্য বিশ্লেষণ (Real-time Analysis for Pollution Prevention) : পদার্থ উৎপাদনকালে যথাসময়ে যথার্থ কাজটি সম্পাদন করা উচিত এবং উৎপন্ন বর্জ্য করতে যথাসময়ে উপকারি দ্রব্য সামগ্রি পুনরুদ্ধার করা উচিত। তা না হলে বর্জ্যগুলো পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
(১২) দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সহজসাধ্য এবং নিরাপদ রসায়ন (Inherently Safer Chemistry for Accident Prevention) : এমন রাসায়নিক পদার্থ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত যাতে যথাসাধ্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটলে সহজে তা প্রতিরোধ করা যায়।
গ্রিন কেমেস্ট্রির প্রয়োগ
১। রাসায়নিক পদার্থের সংশ্লেষণে সেইসব বিক্রিয়ক, বিকারক ও দ্রাবক ব্যবহার করতে হবে যেগুলো মানবজাতি তথা সমগ্র জীবজগৎ ও পরিবেশের পক্ষে বিপদজ্জনক (hazardous) নয়।
২। বিক্রিয়ক ও বিকারকগুলোকে রাসায়নিক বিক্রিয়াকালে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করতে হবে যাতে খুব কম পরিমাণে বর্জ্য সৃষ্টি হয়।
৩। কোনো একটি পদার্থের সংশ্লেষণে এরূপ রাসায়নিক বিক্রিয়া নির্বাচন করা দরকার যাতে বিক্রিয়ক ও বিকারকগুলো প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিক্রিয়াজাত পদার্থে রূপান্তরিত হয়।
৪। সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বর্জ্য পদার্থের উৎপাদন নিবারন করা সম্ভব হবে যদি কাঙ্খিত পদার্থটিকে যুত বিক্রিয়ার সাহায্যে প্রস্তুত করা যায়।
৫। কোনো একটি পদার্থের সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক, বিকারক, বিক্রিয়ার ধরন ও বিক্রিয়া পদ্ধতির জন্য প্রতিনিয়ত বিকল্পের সন্ধান করতে হবে যাতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা যথাসম্ভব কমানো যায়।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে গ্রিন কেমিস্ট্রি কি? গ্রিন কেমিস্ট্রির ইতিহাস বিষয়টিও আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পান, তাহলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।