‘পতঙ্গ’ প্রবন্ধটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো | 'পতঙ্গ' প্রবন্ধটির নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে।
আমি জানি আপনারা “‘পতঙ্গ’ প্রবন্ধটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো | 'পতঙ্গ' প্রবন্ধটির নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন।
'পতঙ্গ' প্রবন্ধটির নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো
নামকরণ :
‘পতঙ্গ’-শীর্ষক প্রবন্ধের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র এক পতঙ্গের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। কমলাকান্ত নসীরামবাবুর বৈঠকখানায় বসেছিলেন। কাচের ডোমে ঢাকা একটি আলোর দিকে একটি পতঙ্গ বারবার উড়ে আসতে লাগল। আলো কাচের ডোমে ঢাকা থাকার জন্য পতঙ্গ আগুনে পুড়ে মরতে পারল না। আবার সে ফিরে গেল।
পতঙ্গের এই আচরণ দেখে কমলাকান্তের মনে হলঃ এ পৃথিবী বহ্নিময়। এখানে সকলেই রূপ-বহ্নি, ধন-বহ্নি, মান-বহ্নি, ধর্ম-বহ্নি, জ্ঞান-বহ্নিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায়। কেউ পুড়ে মরে, কেউ কাচের আবরণে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। চৈতন্যদেব ধর্ম-বহ্নিতে পুড়ে মরেছেন, সক্রেটিস গ্যালিলিয়ো জ্ঞান-বহ্নিতে পুড়েছেন। রূপ-বহ্নি, মান-বহ্নি, ধন বহ্নিতে অহরহ মানুষ পুড়ে মরছে, এই পুড়ে মরার কাহিনি নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য, নাটক ইত্যাদি।
‘পতঙ্গ’ প্রবন্ধ শুরু হয়েছে হালকা চালে, কিন্তু শেষ হয় গুরুগম্ভীর বক্তব্যে। কমলাকান্ত পতঙ্গ ও আলোর রূপকে সংসারের একটি বৃহৎ তত্ত্বরূপ পরিস্ফুট করেছেন। মানুষমাত্রেই পতঙ্গ। তারা বহ্নিতে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মরতে চায়। কাচের ডোমে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। এই কাচের ডোম আছে বলেই মানুষ রক্ষা পায়। সমগ্র প্রবন্ধের মধ্যে পতঙ্গের এই পুড়ে মরার কামনার বার্তা ধ্বনিত হয়েছে বলে প্রবন্ধের 'পতঙ্গ' নামকরণ সার্থক হয়েছে।
সংক্ষিপ্তসার :
বাবুর বৈঠকখানায় সেজবাতি জ্বলছে, পাশে কমলাকান্ত আফিং খেয়ে বসে ঝিমোচ্ছেন। ঝিমোতে ঝিমোতে তিনি দেখলেন, একটা পতঙ্গ এসে বাতির চারধারে বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। তিনি পতঙ্গের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করলেন। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলেন, আলোকে পতঙ্গ বলছে বা সে আলোর সঙ্গে কথা বলছে। পতঙ্গ বলছে যে আগেকার দিনে আলো ভালো ছিল। সে পিতলের পিলসুজের উপর মেটে প্রদীপে শোভা পেত, এতে পতঙ্গ স্বচ্ছন্দে পুড়ে মরার সুযোগও পেত। এখন আলো ঢুকেছে সিসের মধ্যে। চারদিকে কাচের আবরণ থাকে বলে পতঙ্গ আলোর কাছে যেতে পারে না, ফলে তার আর পুড়ে মরবার সুযোগ হয় না।
পতঙ্গের বক্তব্য, পুড়ে মরবার অধিকার তাদের আছে। পতঙ্গজাতি চিরকাল আলোর শিখায় পুড়ে মরে। এখন আলো কাচের আবরণে ঢাকা বলে পতঙ্গ পুড়ে মরতে পারছে না। তারা কি হিন্দুর মেয়ে যে পুড়ে মরতে পারবে না ? হিন্দুর মেয়ের সঙ্গে তাদের অনেক প্রভেদ। হিন্দুর মেয়ে আশা-ভরসা থাকতে কখনো পুড়ে মরতে চায় না। আগে তারা বিধবা হয়, পরে পুড়ে মরতে চায়। কিন্তু পতঙ্গ সবসময়ই আত্ম-বিসর্জনে আগ্রহী।
পতঙ্গের মতো স্ত্রীজাতিও রূপের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মরে বটে, কিন্তু এতেই তাদের সুখ। পুড়ে মরে পতঙ্গজাতির কি সুখ ? পতঙ্গ কেবল পুড়ে মরবার জন্যই মরে।
পতঙ্গের বক্তব্য, আগুনে পুড়ে মরার মধ্যেই শরীরের সার্থকতা। এ শরীরের পুড়ে মরা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। তারা নিত্য নিত্য কুসুমের মধু চুম্বন করে, নিত্য নিত্য সূর্যকিরণে বিচরণ করে, এতে কোনো সুখ নেই। ফুলের সেই একই গন্ধ, একই মিষ্টতা। জগৎ-অসার, পুরাতন ও বৈচিত্র্যশূন্য।
পতঙ্গ আলোর কাছে নিজের প্রাণ দিয়ে যেতে চায়। আলো তো রূপ পোড়াতে জন্মেছে, আর পতঙ্গ পুড়ে মরতে জন্মেছে। যে যার কাজ করে যাওয়াই তো ভালো। আলো বিশ্ব ধ্বংসক্ষম। সে কাচের ভিতর থাকবে কেন, আলো বিশ্বব্যাপী, আলোর ডোম ভেঙে সে কি দেখা দিতে পারে না, আলোর স্বরূপ পতঙ্গ জানে না—সে শুধু জানে আলো তার বাসনার বস্তু—তার জাগ্রতের ধ্যান—নিদ্রার স্বপ্ন-মরণের আশ্রয়। পতঙ্গ কাচ ভাঙতে পারবে না। সে আবার আসবে। এই বলে পতঙ্গ উড়ে গেল।
এবার নসীরামবাবুর ডাকে কমলাকান্তের চমক ভাঙল। তার মনে হল, মনুষ্যমাত্রেই পতঙ্গ। সকলেরই এক-একটি বহ্নি আছে—সকলেই সেই বহ্নিতে পুড়ে মরতে চায়। সকলেই মনে করে সেই বহ্নিতে পুড়ে মরবার অধিকার তাদের আছে। কেউ মরে, কেউ কাচে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। সংসার বহ্নিময়—এখানে আছে, জ্ঞান-বহ্নি, ধন-বহ্নি, মান বহ্নি, রূপ-বহ্নি, ধর্ম-বহ্নি, ইন্দ্রিয়-বহ্নি। সংসার আবার কাচময় বটে। যে বহ্নিতে ঝাঁপ দিতে যাই, আলোর কাচে বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হয়।
কাচ না থাকলে সংসার এতদিন পুড়ে যেত। চৈতন্যদেব ধর্ম-বহ্নিতে, সক্রেটিস, গ্যালিলিয়ো জ্ঞান-বহ্নিতে পুড়ে মরেছেন। রূপ-বহ্নি, মান-বহ্নি, ধর্ম-বহ্নিতে নিত্য নিত্য মনুষ্য-পতঙ্গ পুড়ে মরছে। কাব্যের মধ্যে সেই বহ্নির দাহ বর্ণিত হয়। দুর্যোধন মান-বহ্নিতে পুড়ে মরেছেন। জ্ঞান-বহ্নি দাহের গীত Paradise Lost কর্ম-বহ্নির অদ্বিতীয় কবি–সেন্ট পল। ভোগ-বহ্নির পতঙ্গ অ্যান্টনি ক্লিও পেট্রা। রূপ-বহ্নির পতঙ্গ রোমিও-জুলিয়েট। বহ্নির স্বরূপ আমরা জানি না—এখানে দর্শন বিজ্ঞান হার মানে। সকল দিক দিয়ে বিচার করে বলা যায় মনুষ্যমাত্রই পতঙ্গ।
আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে ‘পতঙ্গ’ প্রবন্ধটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো | 'পতঙ্গ' প্রবন্ধটির নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।