“এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও - আসল ব্যাখা

“এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে। 

আমি জানি আপনারা ““এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন। 

“এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও:

“এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও

জীবনানন্দ দাশ যুগব্যাপী অবক্ষয়িত জীবনকে শাস্তি-সৌন্দর্যের অপার বিস্তৃতি দিয়ে শোধন করে নিতে চেয়েছিলেন। মানবতার যথার্থ উজ্জীবন, মূল্যবোধের সম্যক বিস্তার এসব কিছুর মধ্য দিয়ে মহামানবের যে জীবনচর্যা তাকে যথাযোগ্য স্বীকৃতি এবং অন্তরের অন্তঃস্থলে তার প্রতি আত্মসমর্পণের নিদারুণ ইচ্ছা জীবনানন্দকে বিষণ্ণ অথচ শান্তি সৌন্দর্যের পূজারি করে তুলেছে। 

যে সময়ে বাংলা কাব্যজগতে তার পদার্পণ তখন বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর প্রবল বিনষ্টি ছায়া ফেলেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নৌবিদ্রোহ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মন্বন্তর, দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতার বিপন্ন এক বোধ। এই বিপন্নতাই জন্ম দিয়েছিল সমস্ত কবি শিল্পীদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিনষ্টির বাসনা। 

মানসিক ক্ষয়রোগ প্রতিটি স্নায়ুতে ক্লান্তি ও অবসাদের সূক্ষ্ম আস্তরণ ফেলে দিয়েছিল সেদিন। ব্যক্তিগত জীবনের ক্লান্তি ও অবসাদ শুধু নয় সেইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছিল মৃত্যুর উৎসব। বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক সঙ্কট, জার্মানিতে নাৎসীদের ক্ষমতা দখল, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরু সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু। এই সঙ্কটদীর্ণ সময়ের ছাপ কবিতাগুলিতে পড়েছিল স্বাভাবিক ভাবেই। সভ্যতার সঙ্কটের এই তীব্রতার বছরগুলি বিচ্ছেদের তীব্র ছাপ বুকে নিয়েই জীবনানন্দের কবিতায় এসেছে। তবে ‘বনলতা সেন' কাব্য পর্যায়ে সময়ের এই দীর্ণ সঙ্কট থেকে প্রকৃতির শ্রান্তচ্ছায়ায় মুক্তি পাবার এক প্রবল বাসনা কবি চিত্তে লক্ষ করা যায়। '‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র যে মৃত্যুস্পৃহা বা মর্ত্যপ্রীতি ‘রূপসী বাংলা’ বা 'বনলতা সেন' পর্বে যেন তা অনেকটাই ঘনীভূত রূপ পেয়েছে।


‘সুচেতনা' কবিতাটি ‘বনলতা সেন' কাব্যের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দ্বিতীয় সংস্করণে কবিতাটির অন্তর্ভুক্তি ঘটে। আসলে একাকীত্বের বোধ, বিচ্ছিন্ন জীবন যন্ত্রণার মাঝে মানবমন রচনা করতে চায় সুখ সুন্দর এক পৃথিবীর স্বপ্ন। যেখানে মানবতার অবক্ষয়িত জীবনযাপন নেই, নেই গতানুগতিকতার ক্লেদাক্ত আবিলতায় মানবের নিমগ্ন বিচরণ। কবি জীবনানন্দও এমনই এক ‘আলো পৃথিবী'র সন্ধানে স্বপ্নময় চৈতন্যের জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন। বুঝেছিলেন স্বার্থমগ্ন, সাম্প্রদায়িক এই মানুষগুলির জন্য, এদের পরম্পরাকে শাশ্বত-সত্যের অভিপ্রায়ে আন্দোলিত করবার সময় এসে গেছে। মানবের অন্তলীন সত্তায় প্রোথিত থাকে জীবনের মৌল অনুভবগুলি। হয়তো সময় ও পারিপার্শ্বিকতার প্রবল অভিঘাত সেই সব অনুভূতিগুলির যথাযথ বিকাশ ঘটতে দেয় না। কিন্তু মানবের সত্তায় অন্বিষ্ট সেই অনুভবের বিনাশ কখনও ঘটে না। 'সুচেতনা' কবিতাটির পরতে পরতে সেই অবিনাশী শুদ্ধ চৈতন্যের মানসিক আশ্রয়ভূমির সন্ধান ছড়িয়ে আছে।


চল্লিশের দশকের উত্তাল সময়ভূমিতে চৈতন্যের সুষ্ঠু সুন্দর মানবিক উপলব্ধি কোনোভাবেই সহজলভ্য ছিল না। মানুষের রক্ত-অস্থি-মজ্জায় চেতনার স্বাভাবিক স্ফূরণ ছিল না বলেই লোভ-লালসা-হিংসা-রক্তক্ষয়ী মানসিকতার অশুভ ইঙ্গিত প্রতিনিয়ত বহন করে চলতে হয়েছিল মানবকে। কবিতাটির শুরুতেই তাই কবি 'সুচেতনা'-কে দূরতর দ্বীপ বলে সম্বোধন করেছেন। তমিস্রামগ্ন মানবকে জানিয়েছেন তার আবাসস্থল আর মানুষের প্রতিদিনের আবাসভূমিতে নয়। এই পৃথিবীর স্বাভাবিকতায় মানুষের মানবিক মূল্যবোধে সুচেতনাকে আর পাওয়া যাবে না। বিকেলের নাক্ষত্রিক নির্জনতার আবহে, দারুচিনি বনানী শোভিত একটি নৈসর্গিক পরিমণ্ডলে তার যথার্থ অধিবাস। 

কারণ পৃথিবীব্যাপী রণোম্মত্ত মানসিকতায়, আপাত সফলতার ইঁদুর-দৌড়ে, কষ্টার্জিত আর্থিক ভোগ্যপণ্যের বিনিময়ে সু চেতনাকে পাওয়া যায় না। গতানুগতিক জীবনের অবিলতায় নিমগ্ন থাকাই মানবের একমাত্র লক্ষ ও সত্যপথ হতে পারে না। সেই কারণেই কলকাতা নগরীর আধুনিক স্মার্ট চেহারাতেই কবি সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। আসলে কলকাতার রূপসী চেহারার পিছনে যে ক্লেদাক্ত মানসিকতার আবহ রয়েছে তা প্রকৃতই সুন্দর কলকাতার জন্ম দেয় না। তাই অনন্তকালের চিরচেনা বাক্যবন্ধটি জীবনানন্দের উচ্চারণে ব্যাঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করেছে।


সাম্প্রদায়িক অবক্ষয় ও দাঙ্গা-বিধ্বস্ত কলকাতা নগরে, মূল্যবোধের সীমাহীন নৈরাশ্যপীড়িত পটভূমিতে দাঁড়িয়ে কবি বুঝেছেন মানুষকে ভালোবাসা আর তখন সম্ভব নয়। পৃথিবীর গভীর অসুখ তৈরি হয়ে গেছে। নিজেই সে খুনী হবার মন্ত্র শিখে নিয়েছে। নিহতের ধ্বংসের লীলায় আত্মীয় পরিজনকেও খুন করেছে মানুষ। কিন্তু সর্বব্যাপী অবক্ষয়ের মাঝেও লোভ লালসা, অহংকারের প্রবল নিগ্রহেও কবি আশাপ্রবণ। মনীষীদের জীবন ছুঁয়ে ছুঁয়ে কবি দেখেছেন ভোগ্যপণ্যের অবিলতায় মানুষ নিজের পরিজনের মৃতদেহকেও ব্যবহার করে চলেছে। বুদ্ধ, কনফুশিয়াস থেকে শুরু করে প্রতি যুগের প্রতিটি মহান আত্মাই মনুষ্যত্বের সর্বব্যাপী অবক্ষয় দেখে স্তম্ভিত ও মূক হয়ে পড়েছিল।


কিন্তু তার পরেও কবি বলেছেন সুচৈতন্যের উজ্জ্বল আলোয় পৃথিবীর সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে। ক্রমমুক্তি কথাটি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। কারণ এই আলো জ্বালা একদিনের কাজ নয়। অনেক অনেক শতাব্দী পার করে, কোনো এক সকালে উজ্জ্বল বাতাসে একটি সার্থক মানবসমাজ গড়ে উঠবে। চিরকালের অন্বেষণক্লান্ত পথিক আত্মা নাবিকের বেশে গড়ে দেবে সেই নতুন সমাজ। সভ্যতার অবর্ণনীয় গ্লানি থেকে কবির এই আলো-পৃথিবী খুঁজে পাবার মহান বিশ্বাস ধ্বনিত হয়েছিল প্রতিটি পর্বেই। সুচৈতন্যের শুদ্ধ মানসিক আশ্রয় প্রতিমা সুচেতনা তাই সেই ভাবনার ব্যতিক্রম নয়। সময় অনুসারী কবির মানসিক বিশ্বাসেরও ক্রম উত্তরণ একথা বলা যায়।


আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে “এই পথে আলো জ্বেলে—এপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।”—‘সুচেতনা’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই বিশ্বাসের পরিচয় দাও বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন