উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে।
আমি জানি আপনারা “উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা
সাধারণভাবে ভারতবর্ষ তার তিন দিকেই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিরাপত্তা দ্বারা বেষ্টিত। কিন্তু উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত কয়েকটি গিরিপথ প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের শান্তি ও নিরাপত্তার পথে স্থায়ী বাধা হিসেবে অবস্থান করছে। এই কারণে বার বার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে বিদেশি আক্রমণকারী ও শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্তের পথ ধরেও কিছু বিদেশি শক্তি ভারতে এসেছে, কিন্তু উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের অনুপ্রবেশের তুলনায় তা নগণ্য। প্রাচীনকালে শক, হুন প্রভৃতি জাতি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপথে ভারত আক্রমণ করে এদেশে প্রবেশ করেছে এবং কালক্রমে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মিশে গেছে। মধ্যযুগেও এই পথ বার বার ভারতের নিরাপত্তার বুকে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। তুর্কি-যোদ্ধারা এই পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করে ভারত ইতিহাসে সূচনা করেছে এক নতুন অধ্যায়ের। কিন্তু পরবর্তীকালে তারাই সবচেয়ে বেশি বিব্রত ও নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেছে এই পথকে কেন্দ্র করে। কাবুল, গজনি ও কান্দাহার অঞ্চল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথ ধরে ভারতে ঢোকার পথ নিয়ন্ত্রণ করত। সেই কারণে তুর্কি অনুপ্রবেশকারীরা খুব সহজে ভারতের সীমান্তদেশ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। আবার এই কারণেই বিচক্ষণ ব্রিটিশ শাসকেরা ভারতে ক্ষমতা দখলের পর কাবুল-কান্দাহার গজনি লাইনকে ভারতের বিজ্ঞানসম্মত সীমানা' (Scientific frontier) বলেই গ্রহণ করেছিল। যাই হোক্, দিল্লির তুর্কি-আফগান শাসকেরা এই সীমান্ত পথের গুরুত্ব ও সমস্যা দুই-ই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই প্রথম থেকেই দিল্লির সুলতানের এই সীমান্তপথকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়াসী ছিলেন।
মহম্মদ ঘুরি গজনি ও সন্নিহিত অঞ্চল থেকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। স্বভাবতই উত্তর-পশ্চিমের গিরিপথ দিয়ে ঘুরি যোদ্ধারা সহজেই ভারতের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছিল। দিল্লির প্রথম তুর্কি সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক এই সীমান্তপথের গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক সচেতন ছিলেন। তাই মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর গজনি দখল করে দিল্লি-সুলতানির নিরাপত্তা ও নিজের রাজ্যসীমা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন গজনি দখল করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যায় সাময়িক ছেদ টানতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই সাফল্য স্থায়ী হতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যেই গজনির শাসক তাজউদ্দিন ইলদুজ কুতুবউদ্দিনকে গজনি থেকে বিতাড়িত করেন।
কাবুল ও গজনির ভৌগোলিক গুরুত্ব সম্পর্কে সুলতান ইলতুৎমিস অবহিত ছিলেন। দিল্লির ওপর গজনির আইনগত অধিকার সম্পর্কে তিনি বেশি বিব্রত ছিলেন। গজনির শাসক ইলদুজও তাঁরই মতো মহম্মদ ঘুরির একজন ক্রীতদাস ছিলেন। দিল্লি-সুলতানির ওপর গজনির কর্তৃত্ব কায়েম করার একটা সুপ্ত বাসনাও তাঁর ছিল। মধ্য-এশিয়ার খারিজম (খিবা) সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটলে গজনি ও দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জটিলতা দেখা দেয়। খারিজমের শাহ কর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হয়ে ইলদুজ ভারতে প্রবেশ করেন এবং লাহোর দখল করে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ওপর তাঁর বৈধ কর্তৃত্ব দাবি করেন। মহম্মদ ঘুরির প্রকৃত উত্তরাধিকার হিসেবে ইলদুজের দাবির সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই ইলতুৎমিস দৃঢ়তার সাথে ইলদুজের দাবি অস্বীকার করেন এবং ‘তরাইনের যুদ্ধে' (১২১৫-'১৬ খ্রিঃ) তাঁকে পরাজিত করেন। বদাউনে এনে বন্দি ইলদুজকে হত্যা করে ইলতুৎমিস একদিকে একজন বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত থেকে মুক্ত হন এবং অন্যদিকে গজনির সাথে দিল্লির রাজনৈতিক সম্পর্কে ছেদচিহ্ন এঁকে দেন।
ত্রয়োদশ শতকের প্রথম দশকের শেষদিকে মধ্য-এশিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আবার উত্তেজনার সঞ্চার করে। এই সময় মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খাঁ মধ্য-এশিয়ার বিচ্ছিন্ন ও যাযাবর মোঙ্গল গোষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক দুর্ধর্ষ শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। মোঙ্গলরা ঝড়ের গতিতে পশ্চিম ও মধ্য-এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পদানত করেছিল। সমরখন্দ, বোখরা, খিবা সহ মুসলিম সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমিগুলিতে মোঙ্গল যোদ্ধারা নির্বিচারে লুণ্ঠন ও ধ্বংস কাজ চালায়। খারাজম শাহ মোঙ্গলদের ভয়ে রাজ্য ছেড়ে কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে আত্মগোপন করেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে খোকর নামক উপজাতির বসবাস ছিল। এরাও দিল্লি-সুলতানের বিরোধী ছিল। মঙ্গবরণী খোকরদের সহায়তায় উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাব ও মুলতান দখল করতে সক্ষম হন। অতঃপর মঙ্গবরণী বিধর্মী মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সুলতান ইলতুৎমিসের সাহায্য ও প্রার্থনা করেন। এদিকে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খাঁও মঙ্গবরণীকে পশ্চাদ্ধাবন করে সিন্ধুর তীরে উপস্থিত হয়ে তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন। ফলে ইলতুৎমিস এক গভীর সংকটের মুখোমুখি হন। তিনি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারেন যে, মঙ্গবরণীকে সাহায্য করলে বা রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে মোঙ্গল নেতা দিল্লির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এমতাবস্থায় ইলতুৎমিস কূটকৌশলের আশ্রয় নেন এবং অত্যন্ত বিনীতভাবে মঙ্গবরণীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। এতে মঙ্গবরণী অসন্তুষ্ট হলেও চেঙ্গিজ খাঁ তুষ্ট হন এবং দিল্লির বিরুদ্ধে কোনো অভিযান থেকে বিরত থাকেন। কিছুদিনের মধ্যে চেঙ্গিজ ও মোঙ্গলবাহিনী ভারত সীমান্ত থেকে স্বরাজ্যে ফিরে যায়। মঙ্গবরণী প্রায় তিন বৎসর পশ্চিম পাঞ্জাবে অবস্থান করেছিলেন। মঙ্গবরণীও নাসিরুদ্দিন কুবাচার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব পরস্পরের ক্ষমতা খর্ব করেছিল। তাই ইলতুৎমিস এই অঞ্চলের পরিস্থিতির ওপর কেবল নজর রেখে চলছিলেন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গবরণীও পারস্যে চলে যান। অতঃপর কুবাচাকে পরাজিত করে সিন্ধু- মুলতান অঞ্চলে সুলতানির কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য এই সময় সিন্ধুর উত্তর তীরে মোঙ্গলরা বেশ সক্রিয় ছিল। ফলে দিল্লির প্রকৃত নিরাপদ সীমান্ত সিন্ধুর আরও কিছুটা পূর্বে লাহোর-মুলতান রেখা বরাবর সরে এসেছিল।
ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর দিল্লির দুর্বল সুলতানেরা উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে বিশেষ তৎপর ছিলেন না। ইলতুৎমিস ও বলবনের মধ্যবর্তীকালে আগত সুলতানদের মধ্যে একমাত্র রাজিয়াই মোঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে কিছুটা বাস্তববাদী কর্মসূচি নিতে পেরেছিলেন। এই সময় মোঙ্গলরা খোরাসান ও আফগানিস্তান অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নিয়েছিল। সিন্ধুর উত্তর তীরে মোঙ্গলদের ঘাঁটি গড়ার প্রচেষ্টা বানচাল করার উদ্দেশ্যে মঙ্গবরণীর জনৈক অনুগামী হুসেন কারলুগ দিল্লির সুলতানের সাথে মোঙ্গল-বিরোধী জোট গঠনে উদ্যোগী হন। কিন্তু সুলতান রাজিয়া মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো সংঘাতে যেতে প্রস্তুত ছিলেন না। পরন্তু চেঙ্গিজ খাঁ'র মৃত্যুর (১২২৬ খ্রিঃ) পর থেকে মোঙ্গলরা মাঝে মাঝে সিন্ধুর উত্তরে অভিযান চালালেও দিল্লির সুলতানির নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক কোনো অভিযান চালায়নি। বরং ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ক্ষমতা সংহত করার কাজে তারা বেশি তৎপর ছিল। তাই সুলতান রাজিয়াও মোঙ্গল-বিরোধী কোনো সক্রিয় পদক্ষেপ নেননি।
১২৪০ খ্রিস্টাব্দে রাজিয়ার অপসারণ, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি দিল্লি-সুলতানির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং দুর্বলতা স্পষ্ট তুলে ধরেছিল। ১২৪১ থেকে মোঙ্গলদের ভারত-নীতিতেও মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। এতকাল পর্যন্ত মোঙ্গলরা দিল্লির সুলতানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সার্বভৌম অধিকারকে মর্যাদা দিয়েছিল। দিল্লির সীমান্তদেশ পর্যন্তই তাদের সামরিক কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রেখেছিল। কিন্তু এখন থেকে মোঙ্গলরা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে দিল্লি-সুলতানির অধীনস্থ অঞ্চল আক্রমণ ও লুণ্ঠন করতে শুরু করে। ১২৪১ খ্রিস্টাব্দে বাহাদুর তৈর-এর নেতৃত্বে মোঙ্গলরা লাহোর আক্রমণ করে। তখন দিল্লির সুলতান বাহরাম শাহ। লাহোরের শাসক দিল্লির সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হন। ফলে প্রায় বিনাযুদ্ধে মোঙ্গলরা লাহোর দখল করে লুণ্ঠন ও ধ্বংসকার্য চালায়। সুলতান আলাউদ্দিন মামুদ শাহের আমলে মোঙ্গলরা মুলতান ও সিন্ধুর ওপর আক্রমণ চালায় (১২৪৫ খ্রিঃ)। মুলতানের স্থানীয় শাসক ইরানের মোঙ্গলনেতা হলাকু খাঁ'র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে এবং এই অঞ্চল মোঙ্গলদের হাতে অর্পণ করে একটা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন। দিল্লির দুর্বলতার সুযোগে মোঙ্গলরাও ভারতের ওপর আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। 'বন্দেগান-ই-চাহেলগানী'র প্রভাবশালী সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলবন আপসনীতির মাধ্যমে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে দিল্লি-সুলতানিকে রক্ষার প্রয়াস চালান। সুলতান মাসুদ শাহ মোঙ্গলিয়া ও চিনের মোঙ্গল শাসক মাংগু খাঁ'র বশ্যতা স্বীকার করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তী শাসক নাসিরউদ্দিন মামুদ মোঙ্গল নেতা হলাকু খাঁ'র সাথে সীমান্ত বিষয়ে একটি শান্তি চুক্তি স্থাপনে প্রয়াসী হন। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির আমন্ত্রণে হলাকুর দূত দিল্লিতে উপস্থিত হন। তাঁকে রাজকীয় মর্যাদার সাথে অভ্যর্থনা জানান হয়। বলবনের উদ্যোগে সুলতান নাসিরউদ্দিন ও হলাকু খাঁ'র মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি দ্বারা স্থির হয় যে, মোঙ্গলরা বিতস্তা নদীর তীর পর্যন্তই তাদের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখবে।
আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।