খাদ্যে ভেজাল কি? খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিরোধ লিখ: আসসালামু আলাইকুম, আমি জানি আপনারা “খাদ্যে ভেজাল কি? খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিরোধ লিখ” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে সার্চ করছেন।
এখানে আপনি এই বিষয় সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। তো আসুন আমরা জেনে নিই।
খাদ্যে ভেজাল কি? খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিরোধ লিখ
প্রতিটি মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। আবার ভেজাল খাদ্য গ্রহণ জীবন নাশ করে। বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজগুলোর সাথে জড়িত।
যখন কোন সঠিক খাবার বা উৎকৃষ্ট খাবারের সঙ্গে খারাপ খাবার বা নিকৃষ্ট খাবার মেশানাে হয় তাকে খাদ্যে ভেজাল বলে। যে খাবার মানসম্মত নয়, স্বাস্থ্যকর নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য অধিক ক্ষতিকর সেটাই ‘ভেজাল খাদ্য’।
সুস্থ জীবন আর রােগমুক্ত জীবনের নিশ্চয়তার জন্য ভেজাল প্রতিরােধে সকল মানুষেরই সােচ্চার হতে হবে, প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
"ভেজাল" একটি আইনি শব্দ, যার অর্থ মিশ্রিত, মেকী বা খাঁটি নয় এমন। উৎকৃষ্ট দ্রব্যের সাথে নিকৃষ্ট দ্রব্যের মিশ্রণকে ভেজাল বলে। অন্য কথায় খাদ্যের পরিমাণ, স্থায়ীত্ব অথবা স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কাঁচা বা প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীতে এক বা একাধিক ভিন্ন পদার্থ সংযােজন।
নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩ আলােকে “বিভিন্ন উপায়ে খাদ্যে পরিবর্তন সাধন করে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আইনের অধীন নিষিদ্ধ, খাদ্য দ্রব্যের ক্ষতি হয়েছে, গুণাগুন বা পুষ্টিমান কমে গেছে, খাদ্য ক্রেতার আর্থিক বা স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে” এমন খাদ্যই ভেজাল খাদ্য। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
খাদ্যে ভেজালের কারণ
খাদ্যে ভেজাল এখন মানব জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। ভেজালের প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল মহামারি আকার ধারণ করেছে। খাদ্যে ভেজাল এর জন্য নিম্নরূপ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে–
১. অধিক মুনাফা লাভের আশা
২. তদারকির অভাব
৩. আইনের যথাযথ প্রয়ােগ না হওয়া
৪. নৈতিকতার অভাব
৫. খাদ্য পরিবহণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থার অভাব
৬. ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ।
খাদ্য ভেজাল প্রতিরােধ
খাদ্যে ভেজাল একটি মারাতাক সামাজিক ব্যাধি। কাজেই যেকোনাে মূল্যে ভেজালের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। খাদ্যে ভেজালের প্রতিকার ও করণীয় সম্পর্কে আলােচনা করা হল–
১. আইনী কাঠামাে ও প্রয়ােগ : খাদ্য ভেজাল রােধের জন্য যুগােপযােগী আইন প্রণয়ন অথবা প্রচলিত আইনের সংশােধন করতে হবে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ . (সংশােধিত ২০১৫), নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর যথাযথ প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়ােগের জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে হবে।
২. পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নির্ণয় : প্রচলিত মানদন্ড ও নিবন্ধীকরণ প্রক্রিয়া সংশােধন করতে হবে। মানব স্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পণ্য আইএসও (ISO) কর্তৃক যাচাই করতে হবে।
৩. খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গঠন : প্রতিবেশী বা আঞ্চলিক দেশ সমূহের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরবরাহ, বিনিময় ও মান নির্ণয়ে নিরাপত্তা বলয় গঠন করতে হবে। প্রয়ােজনে WFO, ISO, WHO এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযােগিতা নেয়া যেতে পারে।
৪. সুশীল সমাজের দায়বদ্ধতা : খাদ্যে ভেজাল প্রতিরােধে সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভােক্তা সমিতি, বিভিন্ন বণিক সমিতি ও পরিবেশবাদী সংগঠনকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৫. কারিগরি দক্ষতা ও অবকাঠামাে বৃদ্ধি : বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষণ ইন্সটিটিউট (BSTI), ভােক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (TCB), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালী করে সম্প্রসারিত করা উচিত।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরােধে একটি যুগােপযােগী নিয়ন্ত্রক সংস্থা একান্ত জরুরি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মুক্ত হতে হবে। সর্বোপরি দেশের জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। আইনের প্রয়ােগ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আশা করি “খাদ্যে ভেজাল কি? খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিরোধ লিখ”এই বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছুটা উপকার হয়ে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। "ধন্যবাদ"