সাবিত্রী রায়ের 'অন্তঃসলিলা' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে।
আমি জানি আপনারা “সাবিত্রী রায়ের 'অন্তঃসলিলা' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন।
সাবিত্রী রায়ের 'অন্তঃসলিলা' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো
সাহিত্য সমাজের দর্পণ, বাস্তব জীবনের দলিল। জীবনের চিত্রই প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যে। 'অন্তঃসলিলা' শব্দটির মধ্যে নদীর বিশেষ সাদৃশ্য লক্ষিত হলেও জীবন নামক খরস্রোতা অবস্থার মাঝেই লুকিয়ে আছে অন্তঃসলিলার স্বাধর্ম। নদী যেমন চলার মাঝে তার স্রোতধারায় সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আবার মন্দীভূত স্রোতে আবিলতা যুক্ত হয়ে বীর মন্থর গামীর ন্যায় শ্যাওলা রূপ আবর্জনার সম্মুখীন হয়ে বন্ধ জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়, হারিয়ে ফেলে তার পূর্ব স্বরূপ, অনুরূপ মানুষের জীবন ও অভূতপূর্ব কামনা বাসনার দ্বারস্থ হয়ে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ধেয়ে গিয়ে যখন পরাজয় স্বীকার করে জীবন তখন হয়ে পড়ে বদ্ধ জলাশয়, হারিয়ে ফেলে তার সাধারণ স্বভাব। আলোচ্য গল্পের লেখিকা এমনি একটা দৃষ্টান্ত সংস্থাপনে সচেষ্ট হয়েছেন এই গল্পে। যার নাম রেখেছেন অন্তঃসলিলা। বাইরে থেকে যে স্রোত প্রত্যক্ষ হয় না, অথচ মর্মে মর্মে আড়ালে তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
মনে পড়ে যায় সেই অমর উক্তি—“কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই।” বিশ্বসংসারের এমনই রীতি। কোনো কিছু চিরস্থায়ী নয়। তবে যেটুকু দিয়ে যায় তা অভাবনীয়। কফি হাউস সাহিত্য সংগীত, চারুকলা, প্রভৃতি বিদ্বজনের আড্ডাস্থল রূপে সর্বজন স্বীকৃত। বিশেষ বিশেষ অন্তরঙ্গ বন্ধুর সংস্পর্শে এসে কফি হাউসকে সরগরম করে তোলার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান। গল্পে বর্ণিত দেবব্রত, শিবনারায়ণ, শিবেশ, রঞ্জন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ আড্ডার ছলে সেদিন এসে জুটেছিল কফি হাউসে। আলোচনার মাঝেই হঠাৎ নাম উঠে এলো শকুন্তলা সেন নামক লেখিকার। এই লেখিকার পর পর কয়েকটি উপন্যাস গল্প পত্রিকার প্রকাশ পেয়ে পাঠক মহলে বিশেষ সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেবব্রত শকুন্তলা সেনের লেখার বড়ো ভক্ত। সে মনে মনে একটা দুরন্ত আশা পোষণ করতে যাকে যার লেখার এমন ধার না জানি সে মানুষটা কেমন মহান। তার সঙ্গে আলাপ জমাতে বড় ইচ্ছা জাগে, শুধু তাই নয় আগামী সংখ্যা তার নিজের পত্রিকার শকুন্তলা সেনের একটা লেখা দেবব্রত ছাপাতে ইচ্ছুক। এই সাধ সে গোপন না করে বন্ধুমহলে প্রচারও করে দেয়। অতি সযতনে এবং সুচারু উপায়ে বন্ধুমহল হতে শকুন্তলার ঠিকানা দেবব্রত সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। পরদিন সকলেই দেবব্রত রওনা দেয় শকুন্তলা সেনের উদ্দেশ্যে। “ঘুরতে ঘুরেত একটা আবছা অন্ধকার গলির ভিতরে এসে পড়ে। এই রাস্তাই কি ?” দেবব্রত অবাক হয়ে যায়, এটাও কি সম্ভব শকুন্তলা সেনের মতো একজন নামজাদা লেখিকা এমন কুস্থানে থাকা। সংশয় আর বিস্ময়কে সম্বল করে দেবব্রত এগিয়ে গেল একটা পুরানো সেকেলে বাড়ির দিকে। নির্দিষ্ট বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তেই ভিতর থেকে আওয়াজ আসে ‘কাকে চাই?' তারই নির্দেশে দেবব্রত ধীর পদবিক্ষেপে শকুন্তলা সেনের দরজার সম্মুখে এসে অবশেষে হাজির হয়। একটা ছোট্ট বাচ্ছার মেয়ের আহ্বানে যে ঘরে এসে বসল দেবব্রত, সে ঘরের প্রতিচ্ছবি দেখে সে অবাক না হয়ে পারেনি। চারিদিকে অগোছালো কাগজপত্র, পত্রিকার রাশি, বাচ্ছা মেয়ের কোঁকানির আওয়াজ ইত্যাদি। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হবার পর কথামত শকুন্তলা সেন পর্দা ঠেলে ঘরে এসে প্রবেশ করে। দেবব্রত বিস্ময় মানে এই লেখিকা শকুন্তলা সেন? এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকে লেখিকা শকুন্তলা সেনের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছে ? একদিকে কচি শিশু মায়ের দুধের প্রত্যাশায় ট্যাচাচ্ছে, আরেক দিকে এক বয়স্কা মহিলার ঝাঁঝালো তিক্ত কন্ঠস্বর ভেসে আসছে, ঘরের চতুর্দিকে অপরিষ্কারের চিহ্ন সেই সঙ্গে দারিদ্র্যতার তীব্র কটাক্ষ প্রকাশ পাচ্ছে।
দেবব্রত যে আসায় হাজির হয়েছে, তা অনেক খোঁজাখুঁজির পর শকুন্তলা সেন সেটি আবিষ্কার করে বলে—“এই তো পেয়েছি। আপনাকে কষ্ট করে পড়তে হবে। এখানে ওখানে ছড়ানো রয়েছে লেখাটা।" শকুন্তলা খাতাটা এগিয়ে দিয়ে চলে যায় শিশুর কান্না থামাতে। “দেবব্রত খাতায় মন দেয়। পাঁচ বছর আগেকার পাঠ্যাবস্থায় প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা-রোমান ইতিহাসের ক্লাস নোট...ক্রীতদাস বিদ্রোহ, জুলিয়াস সিজারের হত্যা।” তার পরে নূতনকে লিখতে পড়তে শেখার প্রতিচ্ছবি—'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি। সবশেষে শুরু হয় গল্প—“ময়দানের দিকে এগিয়ে চলেছে হাজার হাজার মানুষের মিছিল।” দেবব্রত আশ্চর্য না হয়ে পারেনি এমনভাবে এমন খাতায় এমন পরিবেশে বিখ্যাত লেখিকা শকুন্তলা সেন আশ্চর্য ধরনের গল্প উপন্যাস সৃষ্টি করে থাকেন?
দেবব্রত গল্পটি পড়াতে মন বসালেও ক্ষণে ক্ষণে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজনের টুকিটাকি কথাবার্তা তার কানে এসে পৌঁছায়। বাচ্ছার কান্না, শাশুড়ি বউ-এর দ্বন্দ্ব, প্রতিবেশিনীদের নানারকম ছলাকলা মূলক কথাবার্তা ইত্যাদি ইত্যাদি। বহুক্ষণ কেটে গেছে চা খাওয়ার পর্বও সমাধা হয়েছে, তারপর—“শকুন্তলা ঘরে ঢোকে—কোলে কাঁথায় জড়ানো রুগ্ন শিশুটির চোখে জ্বরের ঘুম।” দেবব্রতর লক্ষ্য করে শকুন্তলার চোখে মুখে বেদনার গভীর ছায়া জড়িয়ে। শকুন্তলায় প্রতি দেবব্রতর মন মমতায় ভরে ওঠে। শকুন্তলা জানায় গল্পটি এখনো তার শেষ হয়নি মেয়েটির জ্বর হওয়ার কারণে। অকস্মাৎ একটা ছেলে ঘরে এসে শকুন্তলাকে বলে—“দিদি তুমি যে আমাকে দশটা টাকা দেবে বলেছিলে, অপরাধীর মতো শকুন্তলা জানায়—“টাকা তোদের দেব বলেছিলাম, ভেবেছিলাম—গতবারের লেখাটা দিয়ে বুঝি কিছু টাকা পাব। কিন্তু...। দেবব্রত অবাক হয়ে যায়—এই সেই শকুন্তলা সেন।
শকুন্তলা যেন বাস্তব জীবনের রূপকার। কিন্তু তিনি যে জীবনের অংশীদার, সে জীবন ছাড়িয়ে আর কোনো নূতন জীবনের সন্ধান করতে পারেন? দেবব্রত আর বিলম্ব না করে সেখান থেকে ফেরার পথে ভাবতে থাকে— “এই মধ্যবিত্ত সংগ্রামের আড়ালে বয়ে চলেছে লেখিকার জীবনের অন্তঃসলিলা প্রাণের প্রবাহ।” বোধকরি এখানেই এ গল্পের নামকরণের সার্থকতা নিরূপিত হয়েছে।
আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে সাবিত্রী রায়ের 'অন্তঃসলিলা' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।