চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো - আসল ব্যাখা

চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো: আসসালামু আলাইকুম ভাই ও বোনেরা আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি লাখ পড়া মাইমুনা তে। আমার নাম মাইমুনা, আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাদের বিভিন্ন জায়গায় লাগতে পারে। 

আমি জানি আপনারা “চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো” বিষয়ে ধারণা নিতে অনলাইনে খোজাখুঝি করছেন।আর আপনি এখন একদম সঠিক পোস্ট এ আছেন। এখানে আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে সব ভালো ভাবে জানতে পারবেন। 

চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো - আসল ব্যাখা

চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

জ্যোতিরিন্দ্র নাথের গল্প সহজ ভালো বিশ্লেষণ করা যায় না। একটু জটিলধর্মী। গল্পটি উত্তম পুরুষে লেখা। গল্পের অবলম্বন একটা পেঁপে চারা। পেঁপে বললেই মনে পড়ে যায় বিভূতিভূষণের ‘পুঁইমাচার' গল্পটির কথা। গল্পের কথক একটি স্কুলের ছাত্র। একদিন স্কুলে যাবার সময় রাস্তার নর্দমার পাশে সে একটি সবুজ লিকলিকে পেঁপে চারা দেখতে পেয়েছিল। স্কুল ছুটি হওয়া মাত্র অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে সে সোজা ওই 'নর্দমার পাশে এসে সেই চারাটা তুলে এনে তাদের রান্না ঘরের পিছনে ছাই আর জঞ্জাল ভরা জমিটুকুতে যত্ন করে চারাটা পুঁতে দিয়েছিল। সে জানত ওই ছায়া ঘেরা অন্ধকার জমিতে গাছটা হয়তো বাঁচবে না।


গাছটা পোঁতার সময় মিন্টুর সহপাঠী প্রতিবেশী সুকুমারদের বাড়ির চাকর মদন পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাড়িতে ফিরে কঠিন ব্যামোতে ভোগার দরুণ আসতে দেরি করায় সুকুমার মদনকে তাড়িয়ে অন্য চাকরকে রাখে। মদন এসেছে কথকের মায়ের কাছে। মদনের অবস্থা দেখে মিন্টুর মা তাকে রাখতে বাধ্য হয়।


সুকুমারদের তেতলা বাড়ি, মোটরগাড়ি, আরও তিনটে চাকর চাকরানি আসছে; কিন্তু মিন্টুরা সে তুলনায় অত্যন্ত গরিব। তা সত্ত্বেও মদনের অবস্থা দেখে তিনটাকা মাইনে দিয়ে তাকে রেখে দিতে বাধ্য হয়। কাজে লেগে যায় মদন। মিন্টুর মতোই সে এ বাড়িতে ব্যবহার পেতে লাগল। ও ডুমুরের ডাল কেটে পেপের চারাটা ঘিরে বেড়া দিল। গাছের ছায়াটা দূর করে দিল। চারাটার যত্ন করল। মিন্টুর সঙ্গে মদনের খুব ভাব হয়ে গেল।


মদন বলল অন্যের বাড়ি থেকে চারা চুরি করে এনে মিন্টুদের বাড়িতে লাগিয়ে দেবে। সুকুমারদের বাড়ির ওপর মদনের খুব রাগ। মনে মনে সংকল্প করল সুকুমারদের বাড়ি থেকে চারাগাছ চুরি করে আনবে। সেদিন দুপুরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল, ক্রোধবশত মদন পা দিয়ে রাস্তার নোংরা জল ছিটিয়ে সুকুমারের সাদা ধবধবে সার্টিনের শার্ট প্যান্ট নোংরা করে দিল। সুকুমারদের ভূষণ মালি দেখতে পেয়ে মদনকে টেনে হিঁচড়ে সুকুমারদের বাড়ি নিয়ে গেল।


সারারাত মদন ফিরল না। মিন্টু, তার বাবা, মা সবাই দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়ল। পরদিন সকালে মিন্টু সুকুমারদের বাড়িতে গিয়ে দেখল মদন সুকুমারদের বাড়িতে কাজে লেগে গেছে। আবার দিন চারেক পরে মিন্টু দেখল তার সদ্য রোয়া পেপে চারাটিও নেই, বেড়াও ভাঙা, সবাই অবাক।


মাস দুয়েক পর সুকুমারের সঙ্গে মিন্টুর বিশেষ ভাব হয়ে যায়, মিন্টু ওদের বাড়ি যায়, বাগান দেখে, জানতে পারে মদন একটা পেঁপে চারাগাছ এনে লাগিয়েছে। ফলতে আরম্ভ করেছে। মিন্টু তাকিয়ে গাছটা দেখল, মদনকেও দেখাল, কিন্তু কোনো কথাও বলল না, বাড়িতে ফিরে মাকেও না।


মিন্টু সর্বদা সুকুমারদের বাড়িতে যায়, পেঁপে গাছটি দেখে আর মুগ্ধ নেত্রে ভাবতে থাকে, সুকুমারদের বাড়ি থেকে ফিরতে তার মন চাইত না। একটা অদ্ভুত গল্প। সুকুমারদের চাকর মদন বেইমানি করে মিন্টুর হাতে পোতা পেঁপে গাছটা এক বৃষ্টির রাতে চুরি করে নিয়ে গিয়ে সুকুমারদের বাড়ির বাগানে লাগিয়ে দিল। এখানে স্পষ্টতই মদন চোর। কিন্তু গল্পটি শেষ হল সেই চোরকে শনাক্ত করে বা শাস্তি দিয়ে নয়। গল্পের কথক মিন্টু বুঝতে পারল আসলে পেঁপে গাছটাই চোর। না হলে মিন্টু তাদের ছোটো উঠোন, টিনের ঘর, ছায়া ঢাকা ডুমুর তলার কথা ভুলে গিয়ে সুকুমারদের বাগানে পড়ে থাকবে কেন?


এটা সম্পূর্ণ একটা মনস্তাত্ত্বিক গল্প। সব ব্যাপারটাই গল্পকথক মিন্টুর মনের ব্যাপার। পেঁপের চারাটা সে নিজের হাতে লাগিয়েছিল। বাড়ির চাকরকে নিয়ে তার যত্নও করেছিল। সেই গাছই একদিন সেই চাকরই চুরি করে নিয়ে গেল। এ ব্যাপারে সে বন্ধু সুকুমার বা সেই চাকর মদনকে কিছু বলতে পারল না। তার অভিমান হয়েছিল গাছটি নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু গাছটিকে সে যথার্থই ভালোবাসত। এই গাছের টানেই সে সকালে বিকেলে যখনই সময় পেত গাছটিকে দেখতে যেত। যেতে যেতে তার সুকুমারদের বাড়ির প্রতি অদম্য আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের ছোটো উঠোন, টিনের বাড়ির চেয়ে তেতলা বাড়ি, আর মানিকদের প্রতিও তার একটা আকর্ষণ গড়ে উঠেছিল। এমনকি নিজের গরিব মায়ের চেয়ে সুকুমারের মায়ের প্রতিও তার আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল।


অর্থাৎ তার রোগা ময়লা কাপড় পরা মায়ের শুকনো মুখের কথা ভুলে গিয়ে—“ও বাড়ির শাড়ি গয়না পরা প্রগলভ স্বাস্থ্য সুকুমারের মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, আর কখন তিনি সাদা পাথরের বাটিতে করে আমাকে ও সুকুমারকে আপেল, আনারস কেটে দেবেন সেই সোনাঝরা বিকেলের অপেক্ষায় আমি শুকিয়ে থাকতাম।” এমনি করে মিন্টুর মনটাও সুকুমারদের বাড়ির দিকে চলে যাচ্ছিল। নিজের সম্পদের চেয়ে অন্যের সম্পদের প্রতি বড়ো আকর্ষণ এটাই তো চোরেদের কাজ। মিন্টু একথা উপলব্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে যদিও আর কোনোদিন সুকুমারদের বাড়ির দিকে যায়নি তবে সেও যে মদন, পেঁপে গাছটার মতো সে একটা বড়ো চোর একথা সে মর্মে উপলব্ধি করেছিল।


সর্বোপরি, গল্পকথক বা মিন্টুর মা বলেছিল পরের জিনিসের ওপর লোভ করতে নেই। সুকুমারদের বাড়ির চাকর মদন যেমন মিন্টুর পেঁপে গাছটার ওপর লোভ করে চুরি করে নিয়েছিল, তেমনি পেঁপে গাছের প্রতি মায়া দেখাতে গিয়ে মিন্টুর ও সুকুমারদের বাড়ির ওপর, মায়ের প্রতি একটা আকর্ষণ বেড়ে যায়। এই অবস্থায় মদনকে যতটা অভিযুক্ত করা যায় মিন্টুও ততটাই অভিযুক্ত। চুরির এ হেন একটা নূতন ব্যাখ্যা দানে বিস্ময়ের অবকাশ রাখে বলেই গল্পটি নামকরণের দিকে থেকে যথাযথ হয়েছে।


আশা করি আমার ভাই বোনের এই পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে চোর গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো বিষয়টিও তোমরা বুঝতে পেরেছ। যদি এই পোস্টটি থেকে কিছু উপকার পাও, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে কখনো ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন