মে দিবসের কবিতা: প্রিয় ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম, আশে পাশে সবাই একটি বিষয় খুব জানার চেষ্টা করছে। আর সেটা হলো “মে দিবসের কবিতা”। আজকে আমরা জানবো "মে দিবসের কবিতা"। অনেকে আমার কাছে এই বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য এটি নিয়ে আসলাম। আপনি যদি আমাদের valo kobita.com এ নতুন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যয় আমাদের ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখবেন, ধন্যবাদ।
মে দিবসের কবিতা
এখানে আপনারা সকল রকমের মে দিবসের কবিতা পাবেন এইসব কবিতা আপনারা যেখানে ইচ্ছা সেখানে আবৃত্তি করতে পারবেন এই কবিতাগুলো খুবই মানানসই ধন্যবাদ।
শ্রমিক দিবস
নাজমুল রায়হান ভূঁইয়া
খেটে খাওয়া মানুষ আমি
শ্রমিক আমার নাম,
তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে-ই
ঝরাই গায়ের ঘাম।
ইটের বোঝা মাথায় তুলে
গড়ি প্রাসাদ বাড়ি,
জলের উপর সেতু করে-ই
পার করে দেই গাড়ি।
সুঁই সুতোতে নিত্য বুনি
বস্ত্র শত শত,
কল কারখানায় ঘুরাই চাকা
রাত দিন অবিরত।
রক্ত পানি করেই খাটি
ঝরাই গায়ের ঘাম,
মানুষ বলে ওরা কি আর
দেয় আমাদের দাম!
আয়েশ করে-ই সাহেব বিবি
কাটান সুখে দিন,
আমরা শ্রমিক তবু কেন
হয়না যে শোধ ঋণ!
ন্যায্য দাবি হয়নি পূরণ
আজও হেলায় রই,
মে দিবসটি আসলে শুধু
এসব কথাই কই।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
পয়লা মে'তে হয়,
সেমিনারে বড় বুলি
তখন শুধু কয়।
সারা বছর পার হয়ে যায়
কেউ রাখেনা খবর,
আমরা শ্রমিক নিত্য ভুখায়
রচিত হয় কবর।
আমি দেখেছি
লেখক অভিজিৎ মণ্ডল
আমি দেখেছি,
ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ভীড় ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের প্রত্যেকদিন জীবন সংগ্রাম করতে পরিবারের দুমুঠো অন্নের জন্য..
আমি দেখেছি,
মৃত্যুকে সঙ্গীকরে চলন্ত যন্ত্রের সামনে একনিষ্ঠ ভাবে শ্রমিকদের লড়াই..
আমি দেখেছি
ছয় মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে,ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে, এক জননীর শ্রমিকের ভূমিকায় সন্তানের দুধের জন্য পরিশ্রম করতে..
আমি দেখেছি,
ঝড়, বৃষ্টি, রোদকে উপেক্ষা করে আমাদের অন্নদাতা চাষী ভাইদের একমনে ধান বুনে যেতে আমাদের জন্য.
আমি দেখেছি,
চলন্ত ট্রেনে হকার ভাইদের রোজকার করতে, সমাজসেবী সিস্টার দিদিদের রাতদিন রোগীদের সেবা করতে..
আমি দেখেছি,
বাবা কে নিঃস্বার্থ ভাবে পরিশ্রম করতে, রোদ, ঝড় উপেক্ষা করে উপার্জন করতে, দেখেছি,মাকে শত কষ্ট সহ্য করে হাসি মুখে সংসার সামলাতে....
শ্রমিকের অধিকার
- ইউনুছ ইবনে জয়নাল
ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে
ভোগে নয় স্বীয় ধন ত্যাগে
শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও
ভালোবেসে মজলুমের দোয়া নাও ।
ধনী গরীব ব্যবধান মহান স্রষ্টার সৃষ্টি
পরস্পরে সম্পূরক জীবন জগৎ কৃষ্টি।
অহংকার ভুলে যাও দাও মানবিক দৃষ্টি
সম্প্রীতি সততায় ঝরবে প্রভুর রহমতের বৃষ্টি।
শ্রমিকেরা গড়ে দেয় তোমাদের সিঁড়ি
ওদের বাহুবলে থাকো ঢাল রূপ ঘিরি।
নিত্য নতুন বিত্তে উপরে ধেয়ে যাও
সুখে, ভোগে বিলাসী জীবনের তরী বাও।
শ্রমিকেরও আছে অধিকার কড়িয়ালের বিত্তে
এ কথা জেগে তোলো সকলের চিত্তে..!
সহমর্মিতা দেখাও সতত হয়ো না ক্রুদ্ধ
গরীবে দানে হবে ধনীর ধন-সম্পদ শুদ্ধ৷
সময় থাকতে মেনে চলো শোন বিধির বিধান
কর্ম গুণে ফল পাবে হলে তিরোধান।
শ্রমিক মালিকের দর্পণ সূচিত হোক সদাচার
সমন্বিত সদাশয় সুনীতিতে দূর হোক অনাচার।
মে দিবসের কাব্য
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
এ কবিতা হাতুড়ে ও কাস্তের
এ কবিতা ঢাকায় ঢাকায় ঘোরে।
এ কবিতা কংক্রিট ও পাথরের
এ কবিতা মেহনতি মানুষের।
এ কবিতার গা বেয়ে এখনো ঘাম ঝরে
নারীর বগলের ঘাম জমে ওঠে
শিশুর নরম হাতে ভারি হাতুড়ের আওয়াজ ওঠে
শ্রমিকের রক্তের ধারায় রচিত হয় প্রতিটি পঙক্তি।
মে দিবস এলেই এ কাব্য রচিত হয়।
'দুনিয়ার মজদুর এক হও'—স্লোগান ওঠে
শিকাগোর কান্নায় কবিতার বুকে জাগে বেদনার সুর,
দাবির মিছিলে জড়ো হয় অগণিত বঞ্চিত মানুষ ।
মে-দিনে শিকল ভাঙার গান
গাও শ্রমিক! গাও কৃষাণ
মে দিনে শিকল ভাঙার গান
দুর্ হটাও, দাসজীবনের অপমান আর লাঞ্ছনা;
লাল নিশানের আগুনে পোড়াও অন্ধ রাজার বঞ্চনা!
ভাঙো কংসের কারাগার :
দুঃশাসনের স্পর্ধাকে করো লাথি মেরে চুরমার।
এ পৃথিবী তোমাদের
আর যারা জেলে কাটায় রাত্রি, তাদের ।-
মে-দিনের গান তারই তো ঐক্যতান,
গাও শ্রমিক! গাও কৃষাণ
! দুর্ হটাও পৃথিবীর যত নোংরা দূষিত জেলখানা
পোষা কুকুরের বিষদাঁত আর বাস্তুসাপের কালোফণা ৷
ভাঙো কংসের কারাগার :
দুঃশাসনের দত্তকে করো লাথি মেরে চুরমার।
মে-দিনে দুনিয়া-কাঁপানো গান
গাও শ্রমিক! গাও কৃষাণ .....
মে-দিবস, একবিংশ শতাব্দীতে
রচনাঃ ত্রিপুরা শঙ্কর সাহা
ঝরেছে অনেক রক্ত হে মার্কটে
শিকাগোতে আজিকার দিনে
যথায় চলেছিল গুলি সপাটে
জ্যান্ত হয়েছিল লাশ মুহূর্তক্ষণে
৮ঘন্টা কাজ ও ন্যূনতম মজুরী
যা ছিল তুচ্ছ কিন্তু সঙ্গত দাবী
চলল ভয়ঙ্কর বুলেটের খবরদারি
নিমিষে লাশ হল শ্রমিক, অভাবী।
ইতিহাসে ঘৃন্য দিন মে-দিবসে
নিয়েছিল শপথ হতে সমব্যথী
সারা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষে
রহিয়া কর্মহীন হইয়া প্রতিবাদী
কিন্তু পেতেছে কি মূল্য শ্রমিক
তাহা এই একবিংশ শতাব্দীতে
করছে কাজ ৮ ঘন্টার অধিক
পৃথিবীর সমস্ত কল কারখানাতে
দূর্ভাগ্য হারায়েছে জৌলুষ তার
শ্রমিক-কৃষকের নয়নের মনি
মে-দিবস,সর্বহারার হাতিয়ার
মে-দিবস
যুগ যুগ ধ’রে শ্রম বাজারে
আমি হয়েছি পণ্য
আমার মান বিচার করে যারা
সমাজে মান্য গন্য।
তাজমহলের প্রতিটি ফলকে
আমার রয়েছে ঘাম
সৌন্দর্য রসে অবগাহন ক’রে
কেউ করেনা আমার নাম।
জমিদারদের চাবুক খেয়েছি
তবু দিয়েছি শ্রম
মন পাইনি কখনো তাদের
গালি গালাজ হরদম।
অট্টালিকা, রাস্তা ঘাট আর
নদী র ওপর ব্রীজ,
পাহাড় ফাটিয়ে সুরঙ্গ করে
ছুটছে যে বাস ট্রেন,
সাগর বেয়ে ধাইছে জাহাজ
অম্বরভেদী এরোপ্লেন-
সবেরই পেছনে শ্রমিকের শ্রম
শ্রমিকের সময় গেছে
শ্রম -মূল্য পেয়েছে কেউ কেউ
কেউবা সর্বস্ব হারিয়েছে।
শ্রম দিতে গিয়ে দেখা গেছে
কত প্রাণ গেছে বিসর্জন
কতো ছেলে মেয়ে পথে নেমেছে
হারিয়ে তাদের স্বজন।
আমি এখনো শ্রমিকই আছি
শ্রম দিতে ভালোবাসি
মে দিবসের স্বীকৃতি নিয়ে
আনন্দেতে ভাসি।
--বিশ্বরঞ্জন
মে দিবস
বাদ প্রতিবাদ আর সম্বাদ,
আনবে কি কখনো সাম্যবাদ?
সভ্যতার যত অগ্রগতি,
ধনতন্ত্রের দিকে তার মতি।
মুনাফা আর মূলধন,
শ্রমিকের মূল্যায়ন--।
বুর্জোয়া - প্রলেতারিয়েত,
মাঝে জমে কত খেদ।
শ্রমিকের কত নেতা,
ধনতান্ত্রিক সমঝোতা।
তবু চলে ভাঙাচোরা,
তারই মাঝে বাঁচামরা।
মহান মে দিবস
লেখক : চন্দন চক্রবর্তী
ছুটছে রেল ঝন ঝনিয়ে
উড়ছে বিমান আকাশ পানে
গড়ছে কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
চলছে মানুষ হন হনিয়ে
ছুটছে গাড়ি সমুখ পানে
গড়ছে কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
নৌকা চলে ছল ছলিয়ে
ভাসছে জলে জাহাজ দূরে
গড়ছে কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা
যন্ত্র ঘোরে ঠক ঠকিয়ে
ঘাম ঝরিয়ে কায়িক শ্রমে
ঝরায় কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা
মাঠের ধানে দোল দুলিয়ে
ছুটছে বাতাস মাঠ ছাড়িয়ে
ফলায় কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
কাশ ওঠে কার খক খকিয়ে
বস্তি ঘরে রোগ ব্যাধিতে
হচ্ছে কাদের
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
পতাকা ওড়ে পত পতিয়ে
পয়লা মে'র পূন্য দিনে
তুলবে কারা
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
বলরে সবাই জোরসে গলায়
ভাঙবো মোরা শোষণ কারা
শপথ নিলাম
আমরা শ্রমিক আমরা যারা ।
শ্রমিক দিবস
কবিতা সামন্ত
আমরা শ্রমিক,
পাইনা উচিত পারিশ্রমিক।
তাই নেবে ছিলাম আন্দোলনে...
সেই আঠারোশো ছিয়াশি সালের পয়লা মে।
আমেরিকার শিকাগো শহর থেকে...
বাংলাদেশের নানান প্রান্তে।
করা হয়েছে অকথ্য অত্যাচার,
বোমা বাজি থেকে পিস্তলের গুলির বছার।
জানো কি? কতো শ্রমিক ভাই হারিয়েছে প্রাণ,
জানো কি?লড়েছি আমরা কতোদিন খেতে না পেয়ে,
চিৎকার করেছি কোর্টের কাঠ গোরায় দাঁড়িয়ে...
অনেক লড়াই করতে হয়েছে,
তার পর এসেছে আজকের এই শ্রমিক সম্মানের পয়লা মে।
তোমারা যে অট্টালিকাটাতে শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখো...
আমাদের মতো কতো শ্রমিক তার অক্লান্ত পরিশ্রম করে তা তৈরী করেছে।
কতো শ্রমিক তার প্রাণ হারিয়েছে।
কতো নারী তার ছোট্ট দুধের শিশু টিকে পীঠে নিয়ে ইট মাথায় করে একটা একটা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চড়েছে,
কতো পুরুষ দিনের পর দিন না খেয়ে পরিশ্রম করেছে।
জানো কি?তোমাদের ওই ঘরের যতো খাদ্য সামগ্রী...
সবই আমাদের মতো কতো গরীব চাষী দুবেলা না খেয়ে শুধু তোমাদের জন্য ফসল ফলিয়েছে।
নিজের ঘরে খাদ্য নেই...তবুও ফসল ফলিয়ে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
রোজকার দরকারি যতো সামগ্রী যে তোমরা ব্যবহার করো...
তাও এই শ্রমিদের হাতের তৈরী,
তবুও কি শ্রমিকদের একটুও সম্মান পাওয়ার অধিকার নেই?
কথায় কথায় চাকরি থেকে শ্রমিকদের ছাটাই হয়,
কথায় কথায় মলিকরা তার শ্রমিকদের অপমান করে,
কেনই বা সময়ের তুলনায় বেশি কাজ করিয়ে কম পারিশ্রমিক দেওয়া হবে?
সেই জন্যই শ্রমিক আন্দোলন করে নিজের অধিকার দাবি করেছিলো।
আজকের এই বিশ্ব শ্রমিক দিবসে শ্রমিকদের সম্মানে পালন করে।
শুরুটা হোক
---------- প্রতাপ মণ্ডল
তাদের আমরা শ্রমিক বলি, ঝরায় যারা নিত্য ঘাম
শ্রমের ফসল তুলছে যারা পায় কি তারা সঠিক দাম!
উচ্ছে, বেগুন,পটল,মুলো-- ফরেরা সব লুটে খেলো
শ্রমিক যারা বঞ্চিত সব, ছিবড়েটুকুই সার হলো....
তাদের ঘরেও প্রিয়া আছে, আছে তাদের ছেলে মেয়ে
ছিবড়েতে কি আর পেট ভরে! তবু থাকে শান্ত হয়ে...!
ভাবছে তারা আসবে সুদিন! পেটকে ওরা মানায় বশ
তবু তাদের সমস্বরে বলতে হবে, মানতে হবে মে দিবস।
একটা শ্রমের মূল্য অনেক, মে দিবস কাটে ঘরে বসে....
কেউ জানেনা তাদের কথা, শ্রমিক সেদিন আঙ্গুল চোষে!
ওদের ঘরে ঠাণ্ডা মেশিন, ঠাণ্ডা পানীয় ওদের ঘরে --
অনাহারে কোনো শ্রমিক, নয়তো জ্বরে আছে পড়ে..!
ওষুধ কোথায়! পেট ভরানো তাদের কাছে ভীষণ দামী
আমি বুঝি ওদের ব্যথা, কারণ শ্রমিক নিজেই আমি।
এমন করে কাটে না দিন, একদিন তারা উঠবে ফুঁসে
আশায় আছি আমিও নিজে, শুরুটা হোক মে দিবসে।
আশা করি আপনারা “মে দিবসের কবিতা” বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। আসসালামু আলাইকুম।
Tags:
Trending